হিমোগ্লোবিনের অভাব কি?
হিমোগ্লোবিন একটি অক্সিজেনবাহী লৌহসমৃদ্ধ মেটালোপ্রোটিন যা মেরুদণ্ডী প্রাণিদের লোহিত কণিকা এবং কিছু অমেরুদণ্ডী প্রাণির কলায় পাওয়া যায়। এর কাজ শরীরের কোষ ও টিস্যুতে অক্সিজেন বহন করা। স্তন্যপায়ী প্রাণিদের ক্ষেত্রে লোহিত রক্তকণিকার শুষ্ক ওজনের ৯৬ থেকে ৯৭ শতাংশই হয় হিমোগ্লোবিনের প্রোটিন অংশ, এবং পানিসহ মোট ওজনের তা ৩৫ শতাংশ। হিমোগ্লোবিন ফুসফুস হতে অক্সিজেন দেহের বাকি অংশে নিয়ে যায় এবং কোষীয় ব্যবহারের জন্য অবমুক্ত করে। এটি অন্যান্য গ্যাস পরিবহনেও অবদান রাখে, যেমন এটি কোষকলা হতে CO2 পরিবহন করে ফুসফুসে নিয়ে যায়। হিমোগ্লোবিন স্বল্পমাত্রাকে বলা হয় হিমোগ্লোবিনের অভাব, রক্তপরীক্ষার মাধ্যমে সহজেই নির্ণয় করা যায়। পুরুষের ক্ষেত্রে ১৩ দশমিক ৫ জি/ডিএল ও মহিলাদের ক্ষেত্রে ১২ জি/ডিএল চেয়ে কম মাত্রাকে সাধারণত হিমোগ্লোবিনের অভাব বোঝানো হয়।
হিমোগ্লোবিনের অভাবের প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কি কি?
সাধারণত, হিমোগ্লোবিনের সংখ্যা যদি স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য কম থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কোনওরকম উপসর্গ নাও অনুভব করতে পারেন।
হিমোগ্লোবিনের অভাবের উপসর্গগুলি হলো:
- ক্লান্তি
- দূর্বলতা
- মাথা ঘোরা
- বুক ধড়ফড়ানি
- ফ্যাকাসে চামড়া
- শ্বাসের অভাব
- শারীরিক কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়া অক্ষমতা
- পায়ের পাতা ফোলা।
হিমোগ্লোবিনের অভাবের প্রধান কারনগুলো কি কি?
অত্যাধিক রক্তক্ষয়ের কারণে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমতে পারে আর তা একাধিক কারণে হতে পারে:
- আঘাতের কারণে অত্যাধিক রক্তপাত
- ঘনঘন রক্তদান
- অত্যাধিক রজঃস্রাব।
শরীরে লাল রক্ত কণিকার অত্যাধিক ভাঙনের জন্য কিছু অবস্থা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমার কারণ হতে পারে:
- স্প্লিন বা প্লীহার বৃদ্ধি
- সিকল সেল অ্যানিমিয়া বা কাস্তে-কোষ ব্যাধি
- থ্যালাসেমিয়া।
অন্যান্য যেসমস্ত কারণে লাল রক্ত কণিকা পর্যাপ্ত মাত্রায় তৈরি হতে পারে না বলে হিমোগ্লোবিনের অভাব দেখা দেয়, তা হলো:
- ভিটামিন বি১২ কম পরিমাণে গ্রহণ
- হাড়ের মজ্জার অসুখ (কারণ লাল রক্ত কণিকা হাড়ের মজ্জাতে তৈরি হয়)।
- অ্যা্প্লাস্টিক অ্যানিমিয়া - হাড়ের মজ্জার ক্যান্সার, যার ফলে নতুন কণিকা অথবা কোষ তৈরির ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।
- কিডনির অসুখ
- খাদ্যে আয়রন এবং ফোলেটের কম মাত্রা।
হিমোগ্লোবিনের অভাব শুরু হয়; যখন শরীর সঠিক পরিমাণে প্রোটিন পায় না। সাধারণত নারীরা গর্ভবতী হলে, তাদের শরীরের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে নিন্মোক্ত শারীরিক সমস্যার কারণে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হতে পারে।
- ক্যান্সার
- আয়রনের অভাব
- লিউকোমিয়া
- সিরোসিস
- এইডস
- একাধিক মেলোমা
- লিম্ফোমা।
হিমোগ্লোবিনের অভাব কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
হিমোগ্লোবিনের স্বল্প মাত্রা সাধারণ রক্তপরীক্ষার মাধ্যমেই সনাক্ত ও নির্ণয় করা যায়। চিকিৎসক সাধারণত কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট টেস্ট সবার আগে করাতে দেন। এতে রক্তের সমস্ত উপাদান পরিমাপ করা হয়, যেমন শ্বেত রক্ত কণিকা, সাদা রক্তকোষ, প্লেটিলেটস, হিমোগ্লোবিন, হেমাটোক্রিট (লাল রক্ত কণিকা কত শতাংশ রক্ত তৈরি করছে)। যেসব ক্ষেত্রে রক্ত পরীক্ষা করানো হতে পারে:
- ভিতরে রক্তপাতের লক্ষণ
- গর্ভাবস্থা
- রক্তক্ষয়
- কিডনির সমস্যা
- অ্যানিমিয়া
- ক্যান্সার
- নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ সেবন।
কি কারণে অভাব দেখা দিয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে হিমোগ্লোবিনের স্বল্প মাত্রার চিকিৎসা। অ্যানিমিয়া অথবা অপুষ্টির ক্ষেত্রে চিকিৎসক খাদ্যের সম্পূরক দিতে পারেন, যা রক্তে আয়রন, ভিটামিন বি১২ অথবা ফোলেটের মাত্রা বাড়ায়। কোনও চোটের কারনে রক্তক্ষয় হলে ব্লাড ট্রান্সফিউশন বা রক্ত পরিব্যাপ্তির দরকার হতে পারে। সাধারনত, অন্তর্নিহীত কারণগুলির চিকিৎসা করলে হিমোগ্লোবিনের স্বল্প মাত্রার সমস্যা দূর হয়ে যায়। লোহিত রক্ত কণিকা অত্যাধিক মাত্রায় ধ্বংস হওয়ার ক্ষেত্রে রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি সাপ্লিমেন্ট বা সম্পূরকেরও প্রয়োজন পড়তে পারে।