হেপাটাইটিস কি?
হেপাটাইটিস হল শরীরের সবচাইতে বড় অঙ্গ যকৃতের প্রদাহ। যকৃৎ একটি অত্যাবশ্যক অঙ্গ যা খাদ্য হজম, শক্তি সঞ্চয় এবং শরীর থেকে টক্সিন বার করতে সাহায্য করে। হেপাটাইটিস যদি ছয় মাসের মধ্যে সমাধান করা হয় তবে তাকে তীব্র হেপাটাইটিস এবং ছয় মাসের বেশি সময় স্থায়ী হলে তাকে দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস বলে। তীব্র হেপাটাইটিস এমনিতেই ভালো হয়ে যায়, দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস এমনিতে ভালো হতে পারে বা (খুব কমই) তীব্র যকৃতের ব্যর্থতা ঘটায়। দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস যকৃতের দাগ (সিরোসিস), যকৃতের ব্যর্থতা এবং যকৃতের ক্যান্সারকে উস্কে দিতে পারে।

হেপাটাইটিসের প্রকারভেদঃ
বিভিন্ন প্রকারের হেপাটাইটিস দেখা যায়:

  • হেপাটাইটিস এ
  • হেপাটাইটিস বি
  • হেপাটাইটিস সি
  • অ্যালকোহলের হেপাটাইটিস
  • অটোইমিউন হেপাটাইটিস।


হেপাটাইটিসের প্রধান লক্ষন ও উপসর্গগুলি কি কি?
হেপাটাইটিসের অন্তর্গত প্রধান উপসর্গগুলি হলো:

  • পেশীতে ব্যথা
  • গাঁটে ব্যথা
  • জ্বর
  • মাথাব্যথা
  • দীর্ঘকালীন ক্লান্তি
  • জন্ডিস
  • হতাশা
  • অসুস্থ বোধ এবং আলস্য
  • খিদে কমে যাওয়া
  • বারবার পেটে ব্যথা
  • বমি ভাব
  • ডায়রিয়া।


হেপাটাইটিসের প্রধান কারনগুলি কি কি?
হেপাটাইটিস জেনেটিক থেকে শুরু করে ভাইরাল সংক্রমণ, নানা কারণে হতে পারে।

  • হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি, বা ই ভাইরাস সহ ভাইরাল সংক্রমণ
  • মদ্যপান
  • জিনগত বা পরিবেশগত কারণে হওয়া অটোইমিউন অসুখ
  • মেটাবোলিক অসুখ, যেমন যকৃতে অতিরিক্ত চর্বি জমার জন্য নন-অ্যালকোহলিক স্টিটোহেপাটাইটিস (এনএএসএইচ)
  • ব্যথা উপশমকারী এবং জ্বরের করানোর ওষুধ অত্যাধিক পরিমাণে নেওয়ার কারনেও হেপাটাইটিস হতে পারে।
  • হেপাটাইটিস এ এবং ই মূলত দূষিত খাবার এবং পানির মাধ্যমে ছড়ায়। হেপাটাইটিস বি মূলত যৌনবাহিত রোগ। তবে গর্ভাবস্থা বা প্রসবের সময় মা থেকে শিশুর কাছেও যেতে পারে এবং রক্তের মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারে। হেপাটাইটিস সি সাধারণত সংক্রামিত রক্তের মাধ্যমে ছড়ায় যেমন আন্তঃস্রাবী ড্রাগ ব্যবহারকারীদের একত্রে ড্রাগ নেবার সময়। হেপাটাইটিস ডি কেবলমাত্র হেপাটাইটিস বি দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তিদেরই সংক্রামিত করতে পারে।


হেপাটাইটিস কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
রক্তপরীক্ষা ও যকৃতের বায়োপসি (যকৃৎ থেকে টিসুর নমুনা নিয়ে বিশ্লেষণ) করে হেপাটাইটিস নির্ণয় করা হয়। রক্তে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি সনাক্ত করতে অন্যান্য পরীক্ষাও করা হতে পারে। হেপাটাইটিসের প্রত্যেকটি ধরনের জন্য নির্দিষ্ট রক্ত পরীক্ষা রয়েছে।

হেপাটাইটিস এ, বি, ও ডি কে টিকাদানের দ্বারা প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
তীব্র হেপাটাইটিস বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিশ্রাম ও ওষুধে ঠিক হয়ে যায়। মদ্যপান ও ফ্যাট জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকলে উপসর্গগুলি দ্রুত সেরে যায়। প্রচণ্ড বাড়াবাড়ির ক্ষেত্রে, যকৃৎ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় লিভার সিরোসিস অথবা লিভার ফেইলিওর-এর সমস্যায় দেখা দেয়, তখন যকৃৎ প্রতিস্থাপন বা লিভার ট্রান্সপ্লান্টের দরকার পড়তে পারে। দীর্ঘস্থায়ী ভাইরাল হেপাটাইটিসের চিকিৎসার জন্য ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস সি এর ক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধগুলি দেওয়া বাঞ্ছনীয়। শারীরিক কার্যকলাপ, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং ওজন হ্রাস করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

মনে রাখা দরকার, ভাইরাল হেপাটাইটিস বি, সি অসুখ আক্রান্ত শরীর থেকে বের হওয়া সংক্রমিত তরল থেকে ছড়াতে পারে। সেজন্য, আক্রান্ত ব্য়ক্তির ব্যবহৃত জিনিস (টুথব্রাশ, রেজর, ইত্যাদি) এড়িয়ে চলুন। যৌন সম্পর্ক (স্ত্রী যোনির তরল অথবা পুরুষের বীর্য)-এর মাধ্যমেও এই ভাইরাস সঞ্চারিত হতে পারে, এবং সেজন্য সংক্রমণ আটকাতে কন্ডোম ব্যবহার করা আবশ্যক।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে