হেপাটাইটিস এ কি?
হেপাটাইটিস এ (পূর্বে সংক্রামক হেপাটাইটিস নামে পরিচিত ছিল) হল হেপাটাইটিস এ ভাইরাসের (HAV) কারণে হওয়া যকৃতের একটি তীব্র সংক্রামক রোগ, যার কারণে যকৃত (ইংরেজি: লিভার) ফুলে ওঠে। এই রোগটি সাধারণত পাঁচ বছরের কম বয়েসের বাচ্চাদের মধ্যে বেশি দেখা যায় আর এই রোগের কোনও উপসর্গ দেখা দেয় না। যদিও, এই রোগের প্রবলতা বয়েসের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে। সাধারণত, এই সংক্রমণ খুব স্বল্প সময়ের জন্যই স্থায়ী হয় এবং খুব কম ক্ষেত্রেই মৃত্যু ঘটে।

হেপাটাইটিস এ'র প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গ কি কি?
অনেক ক্ষেত্রেই খুব কম উপসর্গ থাকে, কিংবা কোনো উপসর্গই থাকে না, বিশেষতদের ছোটদের ক্ষেত্রে। যাদের মধ্যে উপসর্গ দেখা যায়, তাদের ক্ষেত্রে সংক্রমণ এবং উপসর্গের মধ্যে দুই থেকে ছয় সপ্তাহের ব্যবধান থাকে। যখন উপসর্গগুলো দেখা যায়, তখন সেগুলো সাধারণত আট সপ্তাহ স্থায়ী হয়। সাধারণত যে উপসর্গগুলি দেখা যায়:

  • হলুদ রঙের প্রস্রাব
  • চোখের সাদা অংশ হলদেটে হয়ে যাওয়া
  • হলুদ ত্বক
  • জ্বর
  • তলপেটে ব্যথা
  • দুর্বলতা
  • পাতলা পায়খানা
  • বমি বমি ভাব
  • বমি হওয়া
  • খিদে কমে যায়
  • গাঁটে ব্যথা
  • প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে প্রাথমিক সংক্রমণের পরবর্তী ছয় মাস সময়কালে উপসর্গগুলো আবার ফিরে আসে। বিরল ক্ষেত্রে যকৃতের তীব্র বিকলতা ঘটতে পারে, তবে এটা সাধারণত প্রবীণ মানুষদের মধ্যে বেশি ঘটে।


হেপাটাইটিস এ'র মূল কারণ কি কি?
হেপাটাইটিস-এ সংক্রমণ মূলত হেপাটাইটিস-এ ভাইরাস (এইচএভি) নামক একটি ভাইরাসের করণে হয়। এটা সাধারণত সংক্রামিত মল দ্বারা দূষিত খাবার বা পানি খাওয়া বা পান করার মাধ্যমে ছড়ায়। যথাযথভাবে রান্না করা হয় নি এমন শেলফিশ অপেক্ষাকৃত সাধারণ একটি উৎস।

এই সংক্রমণ এক ব্যক্তির থেকে অপর ব্যক্তির মধ্যে ছড়িয়ে যেতে পারে:

  • অসুস্থ ব্যক্তির দ্বারা রান্না করা খাবার খেলে।
  • অবিশুদ্ধ পানি পান করার কারণে।
  • যৌন মিলন অথবা নিজ যত্ন সামগ্রীর মাধ্যমে সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে ব্যক্তিগতভাবে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা।
  • কাশি, স্পর্শ, আলিঙ্গন ও স্তন্যপানের মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়া সম্ভব নয়।
  • শিশুরা যখন সংক্রমণে আক্রান্ত হয় তখন প্রায়ই তাদের মধ্যে কোনো উপসর্গ না থাকলেও তাদের থেকে অন্যদের সংক্রমণ হতে পারে।
  • একবার সংক্রমণ হওয়ার পরে একজন মানুষের মধ্যে তার অবশিষ্ট জীবনের জন্য রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা তৈরি হয়।


হেপাটাইটিস এ কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
যেহেতু এর উপসর্গগুলো অন্যান্য অনেক রোগের উপসর্গগুলোর অনুরূপ, সেহেতু রোগনির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। আপনি যে উপসর্গগুলি উপলব্ধি করছেন, শারীরিক পরীক্ষা এবং রক্ত পরীক্ষার ভিত্তিতে আপনার ডাক্তার হেপাটাইটিস-এ সংক্রমণ নির্ণয় করবেন। হেপাটাইটিস-এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করার জন্য শরীরের যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে তা চিহ্নিত করা হয়।

হেপাটাইটিস-এ সংক্রমণের কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, প্রয়োজন অনুযায়ী শুধুমাত্র উপসর্গগুলির তীব্রতার ভিত্তিতে চিকিৎসা করা হয়। সাধারণ চিকিৎসায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, প্রয়োজনীয় ওষুধ, পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম এবং ডায়রিয়া ও বমির ফলে শরীর থেকে যে তরল বেরিয়ে গিয়েছে, তার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করা।

সংক্রমণের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আরোগ্য লাভ দেখা যাবে। সংক্রমণগুলো সাধারণত সম্পূর্ণরূপে সেরে যায় এবং যকৃতের রোগ অব্যাহত থাকে না। সাধারণত, লিভার ফেইলিওরের ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হয় এবং প্রয়োজনে লিভার প্রতিস্থাপনের সাহায্যে তার চিকিৎসা করা হয়।

হেপাটাইটিস এ প্রতিরোধে করনীয়ঃ
হেপাটাইটিস এ টিকা প্রতিরোধ করার জন্য কার্যকর। কিছু দেশে শিশুদের জন্য এবং আগে টিকা দেওয়া হয় নি এমন অধিকতর ঝুঁকিগ্রস্ত মানুষদের জন্য এটা নিয়মিতভাবে সুপারিশ করা হয়। এটা সারা জীবনের জন্য কার্যকর বলে মনে করা হয়। প্রতিরোধমূলক অন্যান্য পদক্ষেপের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হলঃ

  • বিশুদ্ধ পানি পান।
  • সঠিকভাবে হাত ধোওয়া এবং সঠিকভাবে পরিষ্কার ও যথাযথভাবে রান্না করা খাবার গ্রহণ।
  • খোসা না ছাড়িয়ে সবজি এবং ফল খাওয়া এড়ানো।
  • সুঁচ কারওর সাথে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করা এড়ানো।
  • সংক্ৰমিত ব্যক্তির সাথে যৌন মিলন এড়িয়ে চলা।
  • শৈশবেই হেপাটাইটিস-এ ভাইরাসের টীকা নেওয়া উচিত।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে