ছুলি বা আমবাত (আর্টিকারিয়া) কি?
ছুলি বা আমবাত (ইংরেজিতে “আর্টিকারিয়া” একটি ল্যাটিন শব্দ “আর্টিকা” হতে এসেছে যা অর্থ করলে দাঁড়ায় “পুড়ে যাওয়া”), সাধারণত যা বুঝায় একধরনের চর্মরোগ যা ফ্যাকাসে লাল রংয়ের, উত্থিত, চামড়ার উপর ছোট ছোট লাল ফুঁসকুড়ির মত দেখায়। ছুলি বা আমবাত চামড়ার উপর একটি জ্বলন্ত বা যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতির সৃষ্টি করতে পারে।

এগুলো সাধারণত অ্যালার্জিক কারণে হয়ে থাকে, তবে অনেক ক্ষেত্রে অ্যালার্জিক কারণ ব্যতিরেকে অন্য কারণেও রক্তস্ফোট হয়ে থাকে।

অধিকাংশ দীর্ঘস্থায়ী রক্তস্ফোট অজানা ইডিওপ্যাথিক কারণে হয়ে থাকে। প্রায় ৫০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে যাদের দীর্ঘস্থায়ী ছুলি হয়, এর কারণ স্বয়ংক্রিয় ইমিউন প্রতিক্রিয়া।

ছুলি বা আর্টিকারিয়ার প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলো কি কি?

  • ছুলি বা আমবাতের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে ত্বকের কোনও অংশে লাল রংয়ের ফুঁসকুড়ির মত দেখতে কোনো কিছুর আবির্ভাব হওয়া। এগুলি আকারে পিন এর সমান অথবা কয়েক ইঞ্চি ব্যাসের হতে পারে।
  • আক্রান্ত স্থানে কখনও কখনও জ্বালা-পোড়ার মত অনুভূতি হতে পারে।
  • চুলকানির মতো অনুভূতির সৃষ্টি হতে পারে।


ছুলি বা আর্টিকারিয়ার প্রধান কারণগুলো কি কি?
ছুলি এক ধরনের ফাঙ্গাসজনিত চর্মরোগ। সাধারণত ত্বক স্যাঁতসেঁতে থাকলে এই রোগ হয়। ছুলি বা আমবাত হওয়র কারণকে বিভিন্নভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে। পরিবেশে অবস্থিত বিভিন্ন উপাদান ছুলি বা আমবাত হওয়ার কারণ ঘটাতে পারে, এর মধ্যে ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, খাবার কিংবা পরিবেশের অন্যান্য উপাদান অন্তর্ভুক্ত।

ছুলি বা আর্টিকারিয়া কিভাবে নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
দীর্ঘস্থায়ী ছুলি বা আমবাতের কারণ খুব কম ক্ষেত্রেই শনাক্ত করা যেতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগ সম্পর্কে নতুন ধারণা পাওয়ার জন্য একটি দীর্ঘ সময়ের নিয়মিত এলার্জি টেস্টিং করার জন্য অনুরোধ করা হয়ে থাকে। দীর্ঘস্থায়ী ছুলিতে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে সাধারণ এলার্জি টেস্টিং এর মাধ্যমে কোনও ফল পাওয়া গেছে বলে এখনও কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই দীর্ঘমেয়াদী ছুলিতে আক্রান্ত রোগীর জন্য সাধারণ এলার্জি টেস্টিং সুপারিশযোগ্য নয়।

তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী ছুলি উভয়ের ক্ষেত্রে থেরাপির প্রধান অবলম্বন হল রোগ সম্পর্কে রোগীর শিক্ষা, ছুলি বা আমবাত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণসমূহ এড়িয়ে চলা এবং এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা।

দীর্ঘমেয়াদী ছুলি বা আমবাতের চিকিৎসা কঠিন হতে পারে এবং এ ক্ষেত্রে রোগের ফলাফল হিসাবে রোগীর বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য অক্ষমতা দেখা দিতে পারে। যদি ছুলি অন্য কোন রোগের সাথে জড়িয়ে যায় বা অন্য কোন সংক্রমণের সাথে জড়িয়ে থাকে, তাহলে তা রোগ ঠিক হয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই সেরে যায়।

অন্যান্য চিকিৎসা
দুরারোগ্য ছুলি উপসর্গ উপশমে ব্যবহৃত অন্যান্য ওষুধ হতে পারে প্রদাহবিরোধী ওষুধ। ওমালিজুমাব এবং ইমিউনোসাপ্রেসানট সম্ভাব্য প্রদাহরোধী ওষুধ হতে পারে যে ওষুধগুলোতে ডেপসন, সালফাসেলাজিন, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ইত্যাদি উপাদান রয়েছে। ডেপসন হচ্ছে একটি সালফোন এন্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্ট যা প্রোস্টাগ্লানডিন ও লিউকোট্রিন এর কার্যকলাপকে দমন করে থাকে। এ সকল ওষুধ দুরারোগ্য ছুলির চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

ছুলি প্রতিরোধের ঘরোয়া উপায়ঃ
ছুলি হলে অনেকেই আতঙ্কে থাকেন তাকে এড়িয়ে চলেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন, ছুলি নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে বরং প্রতিকারের চেষ্টা করা উচিত। ঘরোয়া উপায়েও ছুলি থেকে মুক্তি মেলে। কীভাবে? জেনে নিন:

  • নিয়মিত লেবুর রস দিয়ে ম্যাসাজ করলে ছুলির দাগ ধীরে ধীরে কমে যায়।
  • একটি লেবু মাঝখান থেকে কেটে নিয়ে অর্ধেক অংশে আধা চামচ চিনি ছিটিয়ে আক্রান্ত স্থানে ম্যাসাজ করুন। মাত্র দু’সপ্তাহেই দাগ অনেকটাই মিলিয়ে যাবে।
  • পেঁয়াজে থাকা অ্যাক্সফলিয়েটিভ উপাদান ছুলি নিরাময়ের ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর। একটি পেঁয়াজ মাঝখান থেকে কেটে নিয়ে অর্ধেক অংশটি নিয়ে শরীরের ছুলি আক্রান্ত অংশে দিনে অন্তত ২ বার মালিশ করুন।
  • টক দইয়ের ল্যাক্টিক অ্যাসিড ছুলি দূর করতে খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। ৩ চা চামচ টক দই নিয়ে একটি কটন বলের সাহায্যে শরীরের ছুলি আক্রান্ত অংশে লাগান এবং অন্তত মিনিট পনেরো রেখে ধুয়ে নিন।


ছুলি যদি শরীরের বেশি ছড়িয়ে যেতে থাকে তবে অবহেলা না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে