হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) সংক্রমণ কি?
হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) সংক্রমণ যৌনবাহিত ভাইরাল সংক্রমণ, যা মূলত ত্বকের সঙ্গে ত্বকের যোগাযোগের কারণে হয়। বেশির ভাগ সময় যৌনমিলনের কারণে ঘটে। এই ভাইরাস সংক্রমণ হয় যৌনসঙ্গীর থেকে। পুরুষ, মহিলা উভয়কেই সংক্রামিত করে। এই ভাইরাস ছড়ায় খুবই দ্রুত।

গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপানকে পেছনে ফেলে মুখ ও গলার ক্যানসারের জন্য ভয়াবহ বার্তা বয়ে এনেছে ওরাল সেক্স। হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস বা এইচপিভি হলো এই ব্যাধির প্রধান সংক্রামক। এটি যৌনক্রমে সংক্রামিত ব্যক্তির থেকে একজন সুস্থ ব্যক্তির দেহে যায়। এ ক্ষেত্রে, পায়ুপথ, যৌনাঙ্গ, মুখ, মাথা, গলা ইত্যাদি অঙ্গে ক্যানসার হতে পারে। কোনো মহিলার যৌনাঙ্গে এইচপিভি সংক্রামিত হলে তা কখনো জরায়ুর ক্যানসারের কারণ হতে পারে।

হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস একটি একক ভাইরাস নয়, বরং ভাইরাসের প্রায় ২শত টি ভিন্ন প্রজাতির একটি বিশাল পরিবার যা মানুষকে সংক্রমিত করে। এদের মধ্যে প্রায় ৪০ টি ভাইরাস যৌনবাহিত হয়। তবে ১৩ শতাংশ এইচপিভি ভাইরাস এমন ধরণের যা জরায়ু , গলা বা মুখের ক্যান্সার তৈরি করতে পারে।

এইচপিভি ভাইরাস নিয়ে যেসব ভুল ধারণা প্রচলিত আছে, তার একটি হলো - অনেকেই মনে করে একমাত্র সেক্স বা যৌনতার মাধ্যমেই এই ভাইরাস ছড়ায়। বাস্তবে এইচপিভি সাধারণত যৌনতা-বাহিত, কিন্তু প্রকৃত অর্থে যৌন-সঙ্গম না ঘটলেও - শুধু 'জেনিটাল' বা যৌনাঙ্গ ও 'ওরাল' বা মৌখিক যে কোনো সংস্পর্শের মাধ্যমেই - এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।

এইচপিভি সংক্রমণের প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
এইচপিভি সংক্রমণের উপসর্গগুলি শরীরের মধ্যে প্রবেশ করা ভাইরাসের ধরনের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। কিছু মানুষের শরীরে এই ভাইরাস থাকলেও সেটার লক্ষণ প্রকাশিত হয় না। তবে, যৌনমিলনের সময় অজান্তেই তা অপর ব্যক্তির দেহে সংক্রমিত হয়ে যায়। এই ভাইরাস যখন অন্য কোনো ব্যক্তির দেহে স্থানান্তরিত হয়, তখন লক্ষণগুলো দেখা দেয়। এর ওপর ভিত্তি করে, কোনো চিকিৎসক তাদের শরীরে কী ধরনের এইচপিভি স্থানান্তরিত হয়েছে, তা শনাক্ত করতে পারে।

এ ক্ষেত্রে ত্বকে শতাধিক আঁচিল, গুটি বা ফুসকুড়ি হতে পারে। নিচে এগুলোর সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

  • জেনিটাল ওয়ার্টস: বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যৌনাঙ্গ, মলদ্বার, যোনিতে হতে পারে। এটি দেখতে অনেকটা ফুলকপি, খসখসে চামড়ার মতো হয়ে থাকে।
  • ফ্ল্যাট ওয়ার্টস: এগুলো সাধারণত মুখ, থুতনিতে। এগুলো সমতল হয়।
  • ওরোফারিঞ্জিয়াল ওয়ার্টস: এগুলো বিভিন্ন আকারের হয়। মূলত, জিহ্বা এবং টনসিলের মতো মুখের পৃষ্ঠতলে হয়।
  • সাধারণ ওয়ার্টস: এগুলো মূলত হাত, আঙুলগুলোতে দেখা দেয়।
  • প্ল্যান্টার ওয়ার্টস: এগুলো সাধারণত শক্ত এবং দানাদার হয়। পায়ের গোড়ালিতে দেখা যায়।


এইচপিভি সংক্রমণের প্রধান কারণগুলি কি কি?

  • এইচপিভি সাধারণত সংক্রামিত ব্যক্তির সাথে যৌন সংস্পর্শের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে, কারণ লিঙ্গটি সংক্রমণের সবচেয়ে সাধারণ মোড বা ধরন।
  • একাধিক যৌন সঙ্গী থাকা এবং মৌখিক যৌনতা, সংক্রমণটির ছড়িয়ে পরার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
  • এইডস রোগী এবং অন্যান্য ইমিউন সিস্টেম ডিজিজ বা অনাক্রম্য অসুখ এইচপিভি সংক্রমণ করতে বেশি সক্ষম।
  • এটা শরীরে কোনো খোলা ঘা, কাটা, বা খোলা ক্ষতর মাধ্যমেও প্রবেশ করতে পারে।
  • অ-যৌন সংক্রমণ অন্য ব্যক্তির শরীরের উপরে থাকা একটি আঁচিল স্পর্শের দ্বারা হয়।


এইচপিভি সংক্রমণ কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
একটি শারীরিক পরীক্ষায়, ডাক্তার রোগ নির্ণয়ে পৌঁছাতে আঁচিল পরীক্ষা করেন। মেডিকাল ও যৌন ইতিহাসও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

  • যদি এইচপিভি-র সন্দেহ করা হয় তবে অস্বাভাবিকতা সনাক্ত করার জন্য সার্ভিকাল কোষগুলির উপর তুলোর বল ব্যবহার করে একটি প্যাপ স্মীয়ার পরীক্ষা পরিচালিত হয়।
  • সার্ভিকাল ক্যান্সারের কারণ হল এইচপিভি ভাইরাস যা প্রায়শই পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করে সার্ভিকাল কোষে ভাইরাল ডিএনএর উপস্থিতির দ্বারা নিশ্চিত হয়।


ভাইরাসটিকে নির্মূল করার কোনে চিকিৎসা নেই। এটা সুপ্ত থাকতে পারে বা কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই উধাও হয়ে যেতে পারে।

  • এইচপিভি-র দ্বারা সৃষ্ট মৃদু আঁচিলের জন্য, ডাক্তার খাবার ওষুধের পাশাপাশি টপিকাল ক্রিমগুলিও নির্ধারণ করতে পারেন।
  • যদি আঁচিল ওষুধে ঠিক না হয় তাহলে লেজার বা ক্রায়োথেরাপির দ্বারা অস্ত্রপাচারগত অপসারণ করা হয়।
  • যদি এইচপিভি-র কারণে ক্যান্সার হয় তাহলে কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি সহ ব্যাপক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
  • যদিও এইচপিভি দ্বারা সৃষ্ট সার্ভিকাল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিষেধক টিকা পাওয়া যায় তাহলেও মহিলাদের যৌন সঙ্গমের সময় কনডম ব্যবহার করার মতো সংক্রমণের যোগাযোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।


এইচপিভি নিয়ে চালু আছে যত ভুল ধারণাঃ
কারো এইচপিভি হলে ধরে নিতে হবে যে সে বহু নারী বা পুরুষের সাথে যৌন সম্পর্ক করেছে।
কিন্তু আসলে তা নয়। ব্রিটেনের লোকদের ৮০ শতাংশই জীবনের কোন না কোন পর্বে এইচপিভি ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা আছে। এমনকি জীবনের প্রথম যৌন সংসর্গেও এ সংক্রমণ হয়ে যেতে পারে।

কারো এইচপিভি হবার মানেই হলো তার ক্যান্সার হয়েছে।
আসল ব্যাপার হলো: এইচপিভি আছে প্রায় ২০০ রকমের। এর মধ্যে ৪০ রকম এইচপিভি আপনার যৌনাঙ্গ বা তার আশপাশে হবে এবং সেখানেই এ ভাইরাস বাসা গাড়বে। তবে ১৩ শতাংশ এইচপিভি ভাইরাস এমন ধরণের যা জরায়ু , গলা বা মুখের ক্যান্সার তৈরি করতে পারে - তবে তা খুবই বিরল।

এইচপিভি হলে আপনি টের পাবেন।
কিন্তু বাস্তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এইচপিভি র কোন লক্ষণ দেখা যায় না। অনেক সময় শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাই এ ভাইরাসকে ধ্বংস করে দেয়। তবে জরায়ুমুখের স্ক্রিনিং থেকে এটা ধরা যেতে পারে।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে