হাইপারসোমনিয়া কি?
হাইপারসোমনিয়া হল দীর্ঘস্থায়ী স্নায়ুতন্ত্রের ব্যাধি, যেখানে একজন হয়তো দীর্ঘক্ষণ ধরে রাতের ঘুম অথবা দিনের বেলা অত্যাধিক ঘুমভাব উপলব্ধি করতে পারেন। হাইপারসোমনিয়া হলে কোনো ব্যক্তির পক্ষে জেগে থাকা কঠিন হয়। মানে কিছুক্ষণ পরপরই ঘুম আসবে। অর্থাৎ এটি একটি ঘুমের ব্যাধি। হাইপারসোমনিয়া প্রায়শই অন্য রোগের সাথে জড়িত আর তা রোগীর দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় ঘুমিয়ে যেতে পারে। যেমন কর্মক্ষেত্রে এসে ঘুমিয়ে যাওয়া বা গাড়ি চালানোর সময় নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে যাওয়া।

হাইপারসোমনিয়ার প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
সবেচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হল:

  • সর্বক্ষণ দিনের বেলা অত্যাধিক ঘুমানো বা ঘুম ভাবের অভিযোগ।
  • কাজকর্ম, খাওয়া অথবা এমনকি কথপোকথনের মধ্যেও একজন বারবার হালকা ঘুমিয়ে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।
  • দিনের বেলা অল্প সময়ের জন্য ঘুমিয়ে নিলেও অত্যাধিক ঘুমভাব কমে না, আর লম্বা ঘুমের পর কারওর প্রায়শই বিভ্রান্তিবোধ এবং অস্বস্তি লাগতে পারে।


অন্যান্য উপসর্গ:

  • উদ্বিগ্নতা
  • বিরক্তি বেড়ে যাওয়া
  • অস্থিরতা
  • উদ্যম কমে যাওয়া
  • মন্থর চিন্তাভাবনার প্রক্রিয়া এবং কথাবার্তা, যা সারাদিন ধরে থাকে
  • ক্ষুধামন্দা
  • কোনও পারিবারিক অথবা সামাজিক সমাবেশ এবং পেশাদারী পরিবেশে কাজ করতে অসুবিধা।


হাইপারসোমনিয়ার প্রধান কারণগুলি কি কি?
অন্যান্য স্নায়বিক ব্যাধির মতোই হাইপারসোমনিয়ার কারণও ভালো করে জানা নেই। তবে, শরীরে একটি নির্দিষ্ট অণুর বেশিমাত্রায় উৎপাদন হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, যা মস্তিষ্কের একটি হরমোনের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তন্দ্রাভাব বাড়িয়ে দেয়।হাইপারসোমনিয়ার সাধারণ কারণগুলি হল:

  • ঘুমের ব্যাধি, যেমন ন্যারকোলেপ্সি এবং স্লিপ অ্যাপনিয়া
  • অটোনমিক স্নায়ু তন্ত্রের অকার্যকারিতা
  • মাদক অথবা মদ্যপানের অপব্যবহার


অন্য কারণগুলি হল:

  • টিউমার
  • কেন্দ্রীয় স্নায়ু তন্ত্রে অথবা মস্তিষ্কে আঘাত
  • নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ খাওয়া বা কিছু ওষুধ বন্ধ হওয়া হাইপারসোমনিয়ায় পরিণত হতে পারে, যেমন অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, অ্যান্টিহিস্ট্যামিনিক ও প্রভৃতি
  • ব্যাধি যেমন একাধিক স্কেলেরোসিস, ডিপ্রেশন, এনসেফালাইটিস, মৃগী অথবা ওবেসিটি’র মতো অসুখও হাইপারসোমনিয়ার কারণ হতে পারে
  • জেনেটিক কারণেও হাইপারসোমনিয়ার হতে পারে, এরও প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।
  • অনেক সময় বিষণ্ণতা থেকেও অতিরিক্ত ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
  • হাইপারসোমনিয়া সাধারণত কৈশোরাবস্থার আগেই ধরা পড়ে যায়।


হাইপারসোমনিয়া কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
উপসর্গ এবং ঘুমানোর অভ্যাসের মূল্যায়ন করার জন্য পরিবারের সদস্যের উপস্থিতিতে বিশদে চিকিৎসাজনিত ইতিহাস জেনে নিলে রোগ নির্ণয়ে সাহায্য পাওয়া যায়।

  • যে সমস্ত ওষুধের কারণে হাইপারসোমনিয়া হচ্ছে, তা দূর করতে ওষুধ বন্ধ করতে হতে পারে।
  • চিকিৎসাজনিত অবস্থার অন্তর্নিহিত কারণ নির্ণয়ের উদ্দেশে আপনাকে হয়তো পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।


হাইপারসোমনিয়ার অনুসন্ধানে অন্তর্ভুক্ত:

  • সারারাতে ঘুমানোর পরীক্ষা অথবা পলিসোমনোগ্রাফি (পিএসজি) টেস্ট
  • মাল্টিপল স্লিপ লেটেন্সি টেস্ট (এমএসএলটি)
  • জেগে থাকা বা সচেতনতা পরীক্ষার রক্ষণাবেক্ষণ।


হাইপারসোমনিয়ার চিকিৎসাপ্রণালী নির্ভর করে উপসর্গ থেকে উপশম প্রদান এবং অন্তর্নিহিত কারণের চিকিৎসার উপর

  • অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট এবং সচেতনতা-বর্ধক এজেন্টের মতো ওষুধ
  • কগ্নিটিভ বিহেভরিয়াল থেরাপি (সিবিটি) সহায়ক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে হাইপারসোমনিয়া রয়েছে এমন কিছু রোগীর জন্য।


হাইপারসোমনিয়ায় জীবনযাত্রা পরিবর্তনঃ

  • জীবনযাত্রার কিছু অভ্যাস পাল্টে নিতে হবে। কোনোভাবেই রাত জাগবেন না। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে পারলে ঘুমের সময়টা অন্তত ঠিক থাকবে।
  • রাত জেগে কাজ করা বন্ধ করুন। প্রতি রাতে রুটিন মেনে ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
  • অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন একেবারেই বর্জন করুন।
  • যে ওষুধ আপনাকে তন্দ্রালুভাব করে দেবে, সেগুলো খাবেন না। চিকিৎসককে বলবেন ওষুধ পাল্টে দিতে।
  • চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। যেভাবে চলতে বলবে তা মেনে চলুন।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে