হাইপারথাইরয়েডিজম কি?
থাইরয়েড হলো গলার সামনের দিকে অবস্থিত একটা প্রজাপতি আকারের অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি, যা থেকে উৎপন্ন থাইরক্সিন ও ট্রাইআয়োডোথাইরোনিন নামক হরমোন শরীরের বিপাক কার্যে, শক্তি বাড়াতে, ও মেজাজ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। হাইপারথাইরয়েডিজম হলো এমন একটি শারীরবৃত্তীয় অবস্থা যখন থাইরয়েড গ্রন্থি তার নিজস্ব সমস্যা বা হাইপোথ্যালামাস কিংবা পিটুইটারি গ্রন্থির কোনো রোগের কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় ক্রমাগত অতিরিক্ত থাইরক্সিন হরমোন উৎপাদন করে। থাইরয়েড গ্রন্থির গড়বড় বহু পদ্ধতির বিপাক কার্যে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যের সাথে জড়িত প্রধান সমস্যা হল অতিসক্রিয় এবং কমসক্রিয় থাইরয়েড হরমোনের সৃষ্টি। থাইরয়েডের সমস্যা পুরুষের তুলনায় ২০ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়।

হাইপারথাইরয়েডিজমের প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কি কি?
অতিসক্রিয় থাইরয়েড গ্রন্থি অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোন তৈরী করে, এই অবস্থাকে হাইপারথাইরয়েডিজম বলে। হাইপারথাইরয়েডিজম বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণের সাথে উপস্থিত হতে পারে। লক্ষণগুলি ব্যক্তিবিশেষে পরিবর্তিত হয়। অতিসক্রিয় থাইরয়েডের উপসর্গগুলো নিচে দেওয়া হল:

  • ওজন কমে যাওয়া।
  • দুশ্চিন্তা, খিটখিটে ভাব, এবং মেজাজের পরিবর্তন।
  • বড় আকারের থাইরয়েডের জন্য গলা ফুলে যাওয়া (গয়টার বা গলগণ্ড)।
  • দুর্বলতা।
  • হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া।
  • প্রচুর ঘামা, গরম একেবারে সহ্য না করতে পারা।
  • অনৈচ্ছিকভাবে হাত কাঁপা।
  • উদ্বেগ।
  • ঘুমের সমস্যা।
  • ত্বক পাতলা হওয়া।
  • সূক্ষ্ম ভঙ্গুর চুল।
  • পেশী দুর্বলতা, বিশেষত উপরের বাহু এবং উরুর।
  • মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক হওয়া।
  • চোখে ঝাপসা দেখা।
  • পাতলা পায়খানা ঘন ঘন হওয়া।


হাইপারথাইরয়েডিজমের প্রধান কারণগুলো কি কি?
হাইপারথাইরয়েডিজমের প্রধান কারণগুলো নিচে দেওয়া হল:

  • হাসিমোটর থাইরয়েডাইটিস নামক অটোইমিউনো ডিজিস থাকলে।
  • গ্রেভস ব্যাধি।
  • থাইরয়েড গ্রন্থিতে নডিউলস।
  • অতিরিক্ত আয়োডিন গ্রহণ।
  • পিটুইটারি গ্রন্থিতে নন-ক্যান্সার টিউমার।
  • ভাইরাল সংক্রমণের জন্য থাইরয়েড গ্রন্থিতে প্রদাহ।
  • থাইরয়েড ক্যান্সার।
  • আয়োডাইড ইন্ডিউস ড্রাগ যেমন, amiodaron।

এছাড়া আরো অনেক কারণে হতে পারে।

হাইপারথাইরয়েডিজম কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
যে কোনো প্রকার থাইরয়েডের সমস্যা নিম্নলিখিত উপায়ে নির্ণয় করা হয়:

  • গলার শারীরিক পরীক্ষা।
  • রক্তপরীক্ষা: থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন (টিএসএইচ) টি৩, এবং টি৪ এর মাত্রা জানার জন্য।
  • আয়োডিন গ্রহণের পরীক্ষা।
  • গ্রন্থিতে নডিউলসের আল্ট্রাসাউন্ড ইমেজিং।
  • গ্রন্থিতে অস্বাভাবিক বৃদ্ধির বায়োপসি।


রক্ত পরীক্ষায় সনাক্ত হওয়া গ্রন্থি এবং হরমোন স্তরের দ্বারা প্রদর্শিত কার্যকলাপ অনুসারে থাইরয়েড সমস্যাগুলির চিকিৎসা ভিন্ন হবে। নিম্নলিখিত উপায়ে হাইপারথাইরয়েডিজমের চিকিৎসা করা হয়:

  • ওষুধ: রেডিওঅ্যাক্টিভ আয়োডিন, অ্যান্টি-থাইরয়েডের ওষুধ, এবং অ্যান্টি-প্রদাহের ওষুধ। থাইরোস্ট্যাটিকস (অ্যান্টিথাইরয়েড ড্রাগ) এমন ওষুধ যা থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদনকে বাধা দেয়, যেমন কার্বিমাজোল (যুক্তরাজ্যে ব্যবহৃত) এবং মেথিমাজোল (মার্কিন যুুুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি এবং রাশিয়ায় ব্যবহৃত), এবং প্রোপিলিথিউরাসিল । থাইরয়েড টিস্যুতে সাধারণত থাইরয়েড হরমোনের যথেষ্ট পরিমাণে রিজার্ভ থাকে, তাই থাইরোস্ট্যাটিকস কার্যকর হওয়ার জন্য কয়েক সপ্তাহ সময় নিতে পারে এবং নিয়মিত ডাক্তার দেখা এবং রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হয়।
  • সম্পূর্ণ থাইরয়েড গ্রন্থি বা এর কিছু অংশ অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া হয়।
  • নিয়মিত চেক-আপ এবং ফলো-আপ, হাইপারথাইরয়েডিজমের যত্ন নিতে সহায়তা করতে পারে। ভিটামিন, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়োডিন এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ একটি সুষম খাদ্য আপনাকে থাইরয়েডের সমস্যাগুলি দূরে রাখতে সহায়তা করতে পারে।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে