আয়রন ঘাটতি কি?
মাঝে মাঝেই ভীষণ ক্লান্ত লাগে? এদিকে হাজারটা কাজের চাপে সেদিকে নজর দেয়ারও সময় মেলে না? কাজের চাপ যতই থাকুক, এই ক্লান্তিবোধকে কখনো অবহেলা করবেন না। আবার এই ক্লান্তি যে কাজের চাপের কারণেই দেখা দিচ্ছে, এমনটা না-ও হতে পারে। শরীরের অভ্যন্তরে কোনো সমস্যার কারণেও এটি হতে পারে। বিশেষ করে নারীরাই আয়রনের ঘাটতিতে বেশি ভোগেন। তবে ছেলেদেরও রক্তে আয়রনের ঘাটতি এখনকার দিনে বড় সমস্যার।

শরীরে আয়রনের স্বাভাবিক মাত্রা পুরুষদের ক্ষেত্রে সাধারণত রক্তে ১৩ দশমিক ৫ থেকে ১৭ দশমিক ৫ জি/ডিএল এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ১২ থেকে ১৫ দশমিক ৫ জি/ডিএল। এই মাত্রাগুলির নীচে শরীরে আয়রন থাকলে, একজন ব্যক্তির আয়রনের ঘাটতি আছে বলে মনে করা হয়। এর অন্যান্য কার্যকারিতা ছাড়া, আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মুখ্য উপাদান গঠন করে।

আয়রন ঘাটতির প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
আয়রনের ঘাটতিতে প্রায়ই যেসব সমস্যাগুলি দেখা যায় সেগুলি হল:

  • কম হিমোগ্লোবিনের কারণে অ্যানিমিয়া এবং আয়রনের ঘাটতির কারণে রক্ত কোষগুলি সঠিকভাবে গঠিত হতে পারে না।
  • শরীর হঠাৎ দুর্বল হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সারাদিনই শরীরে অবসাদ এবং ক্লান্তি বোধ হতে পারে।
  • রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কম থাকার কারণে, একজন ব্যক্তি সহজে সংক্রমণে আক্রান্ত হয়।
  • ফ্যাকাসে ত্বক।
  • চুল পড়া।
  • জিভে প্রদাহ, এবং লালচে ভাব।
  • নখ দেখেও বোঝা যায় শরীরে আয়রনের ঘাটতি আছে কি না। নখ যদি নরম থাকে আর বারবার ভেঙে যায় তাহলে বুঝবেন শরীরে আয়রনের অভাব আছে।
  • হঠাৎ যদি জিভ ফুলে যায় তাহলে অবশ্যই আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খান। তার আগে অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করে দেখুন।
  • অনেক সময়ে আয়রনের অভাব হলেও প্রায়ই মাথা ধরার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • হঠাৎ করে হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকলে এ সমস্যা হতে পারে।
  • হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। এটি শরীরে আয়রনের ঘাটতির কারণ হতে পারে।
  • যদিও বিভিন্ন কারণে ঘনঘন জ্বর আসতে পারে। তবে সব সময় ঠান্ডা লাগার কারণে নয়, আয়রনের অভাবেও এটি হতে পারে।
  • অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যাকে সাধারণভাবে নেওয়া উচিত নয়। হঠাৎ করে যদি অধিক চুল পড়তে থাকে তাহলে তা হতে পারে আয়রনের ঘাটতি।


আয়রন ঘাটতির প্রধান কারণগুলি কি কি?
আয়রন ঘাটতির একটি অন্যতম প্রধান কারণ হল আয়রন শরীরে সঠিকভাবে শোষিত না হওয়া। নিরামিষাশীদের খাদ্যতালিকায় সাধারণত আয়রনের অভাব দেখা যায়। আয়রনের শোষণে ক্যালসিয়ামও বাধার কারণ হতে পারে; অতএব, দুধ বা দুধ জাতীয় খাদ্যের সাথে আয়রনসমৃদ্ধ খাদ্য খাওয়া উচিত নয়। নির্দিষ্ট কিছু অবস্থায় বেশি পরিমাণে আয়রন গ্রহণের প্রয়োজন হয়, যেমন গর্ভাবস্থায়। মহিলাদের অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন প্রায়শই আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। কোন আঘাত বা সার্জারির কারণে প্রচুর পরিমাণে রক্ত শরীর থেকে বেরিয়ে গেলে ঐ ব্যক্তির আয়রনের অভাব দেখা দিতে পারে। এইভাবে সন্তান জন্ম দেওয়ার পর মহিলাদের মধ্যে আয়রনের অভাব দেখা দিতে পারে। মাসিকের সময় রক্তক্ষরণ আরেকটি কারণ যা মহিলাদের মধ্যে আয়রন ঘাটতির অধিকতর প্রভাবের জন্য দায়ী।

আয়রন ঘাটতি কিভাবে নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
চিকিৎসাগত পরীক্ষার মাধ্যমে আয়রনের ঘাটতি নির্ণয় করা হয়। রক্ত পরীক্ষা এবং হিমোগ্লোবিন এবং হেমাটোক্রিট পরীক্ষা সাধারণত আয়রন ঘাটতি নির্ণয় করার জন্য যথেষ্ট। আয়রন সাপ্লিমেন্ট বা সম্পূরক এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া চিকিৎসারই অন্তর্ভূক্ত। আয়রন ট্যাবলেট প্রেসক্রিপশন ছাড়াই যেকোন ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়; যদিও এটি সেবনের সময় সতর্ক হওয়া উচিত বা ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ অতিরিক্ত প্রয়োগের ফলে এর পার্শপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। দুধের সাথে আয়রন সাপ্লিমেন্ট সেবন এড়িয়ে চলুন কারণ এটি শরীরের আয়রন শোষণে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদি গুরুতর রক্ত ক্ষরণের কারণে আয়রন ঘাটতি দেখা দেয়, সেই ব্যক্তিকে রক্ত দেবার প্রয়োজন হতে পারে।

আয়রনের ঘাটতির কারণে কি রোগ হতে পারে?
আয়রনের ঘাটতি অনেক রোগের কারণ হয়। যেমন:

  • হার্ট এবং ফুসফুস সম্পর্কিত রোগ।
  • শরীরে অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করা। এমনকি সেই করণে নিয়মিত ব্যায়াম করা সম্ভব হয়না।
  • আয়রনের অভাবের কারণে কিছু মহিলা গর্ভাবস্থায় রক্তাল্পতায় আক্রান্ত হন।
  • অতিরিক্ত আয়রনের ঘাটতির কারণে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়।
  • এগুলি এড়াতে অবশ্যই আপনার ডায়েটে আয়রন অন্তর্ভুক্ত করুন এবং আপনার শরীরকে রোগ থেকে রক্ষা করুন।


কিভাবে আয়রনের ঘাটতি রোধ করবেন?

  • আয়রনের ঘাটতি রোধ করার সহজ উপায় হল আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া।
  • ছোট বাচ্চাদের এক বছরের না হওয়া পর্যন্ত গরুর দুধ পান করা উচিত নয়।


আয়রন সমৃদ্ধ খাবারঃ

  • লাউ, কুমড়োর বীজ, ক্যাপসিকাম, সবুজ শাকসব্জী, পালং শাক, সিদ্ধ আলু, মটরশুটি তে আয়রন অন্তর্ভুক্ত। অন্যান্য শুকনো ফল ইত্যাদিতে লোহা থাকে।
  • আমিষের মধ্যে সীফুড, ডিম, মিট, মুরগি ইত্যাদিতে প্রচুর আয়রন থাকে।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে