খিটখিটে মেজাজ কি?
কোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির শিকার হলে রাগ এসে যাওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে তা অনিয়ন্ত্রিত হওয়া মানবীয় ত্রুটি। অল্পতেই ধৈর্য হারিয়ে ফেলছেন। এর-ওর সঙ্গে ঝগড়া লেগে যাচ্ছে। অথচ আপনি এমন ছিলেন না। ইদানীং কী এমন হলো যে আপনার মেজাজ এত খারাপ যাচ্ছে? এমন হতে পারে কি, আপনি শারীরিক বা মানসিক কোনো সমস্যায় ভুগছেন?

হঠাৎ মন-মেজাজের পরিবর্তন, আকস্মিক রাগ বা আবেগের বহিঃপ্রকাশ—মানুষের স্বাভাবিক আচরণের মধ্যেই পড়ে। তবে খিটখিটে মেজাজ মানে অহেতুক প্রতিক্রিয়া বোঝায়। এটাকে মেজাজের উপর কম নিয়ন্ত্রণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়, যেটার ফল হয় আকষ্মিক মৌখিক বা আচরণগত বিস্ফোরণ, যদিও এই মেজাজের প্রকাশ বাইরে থেকে বোঝা যায় না। এটা দীর্ঘস্থায়ী, সাধারণ বা কম সময়ের জন্য হতে পারে। খিটখিটে মেজাজ একটা স্বাভাবিক বিরক্তির প্রকাশ হতে পারে বা কোনো অন্তর্নিহিত রোগের ফলে হতে পারে।

খিটখিটে মেজাজের প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কি কি?
খিটখিটে মেজাজের সাধারণ উপসর্গগুলি হলো:

  • বদমেজাজ বা অল্পতেই রেগে যাওয়া।
  • অত্যধিক হতাশা।


দীর্ঘকালীন ও অত্যধিক খিটখিটে মেজাজের উপসর্গগুলি হলো:

  • প্রচন্ড প্রতিক্রিয়া যেটা প্রকাশ পায় সম্পর্কহীন ব্যক্তির উপর।
  • হতাশা, মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তা অহেতুক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
  • দীর্ঘকালীন খিটখিটে মেজাজের কারণে মানসিক চাপ দেখা দেয়।
  • ভুল বা আজগুবি ধারণা, অনিদ্রা, সন্দেহ, অস্থিরতা ও মনোযোগের অভাব দেখা দেয়।


খিটখিটে মেজাজের প্রধান কারণগুলি কি কি?
খিটখিটে মেজাজ সবসময়ই কোনো অন্তর্নিহিত কারণের জন্য হয় না। এটা নিয়মিত বিরক্তি, বারবার উসকানো বা দীর্ঘ মানসিক চাপের কারণেও হয়।

খিটখিটে মেজাজের সাধারণ কারণগুলি হল:

  • বিভিন্ন অসুখ যেমন পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম, মেনোপস, হাইপারথাইরয়েডিসম, দাঁতে ব্যথা, ফ্লু, এবং কানে সংক্রমণ।
  • মানসিক অসুখ যেমন চাপ, দুশ্চিন্তা, হতাশা, বাইপোলার অসুখ, সিজোফ্রেনিয়া, মনোযোগের ঘাটতি ও অতি মাত্রায় সক্রিয় এবং অটিজম। এটা সাধারণত কিশোর এবং তরুনাবস্থায় দেখা যায়।
  • শিশুদের মধ্যেও খিটখিটে মেজাজের উপসর্গ এবং সাথে বেপরোয়া আচরণ দেখা দিতে পারে।
  • মহিলাদের মধ্যে খিটখিটে মেজাজ পরিষ্কার দেখা যায় মাসিকের আগে, পেরিনাটাল এবং পেরিমেনোপসাল কালে।
  • কাজ পাগল জীবনও খিটখিটে মেজাজের সাথে জুড়ে থাকে।
  • দীর্ঘ মানসিক চাপ।
  • মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করার অক্ষমতা।
  • মদ্যপানের অভ্যেস।
  • থাইরয়েড হরমোন বেড়ে যাওয়া।
  • শারীরিক অসুবিধা।
  • শরীর সূর্যালোক থেকে বঞ্চিত হওয়া।


খিটখিটে মেজাজ কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
রোগীর ইতিহাস ভাল করে শুনে এবং তার মূল্যায়ন করে তারপর এই রোগের সনাক্তকরণ করা হয়। পরিবারের সদস্যদেরও বলা হয় উপসর্গগুলির ইতিহাস জানাতে, যেটা সনাক্তকরণের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়ও।

আপনার চিকিৎসক আপনাকে এই রোগের মূল কারণ অনুসন্ধান করার পরামর্শ দিতে পারেন।

খিটখিটে মেজাজের চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে মূল স্বাস্থ্যের অবস্থার এবং আরও অন্যান্য কারণ যা এই রোগ সৃষ্টি করছে তার পরিমাপ করা এবং তা নিয়ন্ত্রণ করা।

খিটখিটে মেজাজের চিকিৎসার জন্য কগ্নিটিভ আচরণগত থেরাপী এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি যেমন, ধ্যান করা এবং মনোযোগী হতে পরামর্শ দেওয়া হয়।

চিকিৎসক কিছু ওষুধ দিতে পারেন যেমন অবসাদ কমানোর ওষুধ এবং মেজাজ ঠিক রাখার ওষুধ।

খিটখিটে মেজাজ দূর করতে কিছু বিষয় খুবই কাজে দেয়, যেমন:

  • কোনো শারীরীক কসরত করা যেমন হাঁটা বা সাঁতার কাটা।
  • বই পড়া, গান শোনা।
  • শ্বাসের ব্যায়াম করা।


ঘরোয়া উপায়ে খিটখিটে মেজাজ দূর করবেন যেভাবেঃ

  • শান্ত থাকুন : কোনো কারণে বিরক্তি হলে তার প্রভাব পড় মেজাজের ওপর। খিটমিটে লাগে সব কিছুতে। তবে এ খিটমিটে মেজাজের সময় শান্ত থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। না হয় বড় ধরনের কোনো ভুল হয়ে যেতে পারে।
  • সবকিছু মনের গভীরে নেবেন না : রাগের মাথায় মানুষ অনেক কিছুই বলে, সবকিছুকে সিরিয়াসলি মনে নিতে নেই। সব কিছু দেখতে নেই। কিছু জিনিস দেখেও না দেখার ভান করা ভালো। পাত্তা দিলেই ঝামেলা বাড়ে।
  • পর্যাপ্ত ঘুম : বিষণ্ণতার প্রথম এবং প্রধান কারণ হলো ঘুমের অভাব। আপনাকে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। ঘুমের ব্যাঘাত শুধু আমাদের শারীরিকভাবেই ক্ষতি করে না, এটা তৈরি করে মানসিক অবসাদ এবং বিষন্নতা। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা ঘুমালে বিষণ্ণতা দূর করা অনেকটা সহজ হয়ে যায়।
  • সঠিক খাদ্যাভ্যাস : সঠিকভাবে খাদ্যগ্রহণ এ রোগ অনেকটা কমিয়ে দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, উপযুক্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবারের অভাবে বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে আর তাই তারা ভিটামিন বি সমৃদ্ধ খাবার খেতে বলেন বেশি করে।
  • মন ফ্রেশ রাখুন : বিষণ্ণতায় ভুগছেন কিন্তু ভবিষ্যতে এমন ডজন ডজন ঘটনা ঘটতে পারে যেটা সম্পর্কে আপনার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই আর তাই বিষণ্ণতা থেকে বের হয়ে মনকে রাখতে হবে উৎফুল্ল। নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হোন, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করুন, সময় ব্যয় করুন। এমন হতে পারে এদের সঙ্গে মিশে এতটাই আনন্দিত হবেন যে আপনি কল্পনাও করতে পারেননি। আপনার দিনগুলো হয়ে উঠতে পারে আনন্দময়। অতএব আনন্দময় মুহূর্তগুলোর কাছে কৃতজ্ঞ হোন।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে