TarikAziz

Call

কিভাবে স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করলে চার্জ বেশীক্ষণ ধরে রাখা যাবে সেটিই আমরা এখন দেখব।


ব্যাটারি যখন নষ্ট হওয়ার পথে: অনেকসময় দেখা যায় আপনার ডিভাইসে পর্যাপ্ত চার্জ থাকছে না। আপনার আশেপাশে অনেকেই একই সমস্যায় ভুক্তভোগী। আসলে আপনি যখন এক বছরের অধিক সময় ধরে যেকোনো ডিভাইস ব্যবহার করবেন তখন এটি ঘটা খুবই স্বাভাবিক। এর বাইরে আপনি যদি সারাদিন খুব বেশী আপনার ডিভাইসটি ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে দিনশেষের আগেই হয়তো আপনার ডিভাইসের চার্জ ফুরিয়ে যাবে।


ব্যাটারি পরিবর্তনশীল একটি বস্তু। আর ব্যাটারি প্রথমত কি কারণে নষ্ট হয় বেশীরভাগ মানুষই তা জানেনা। ব্যাটারির দীর্ঘস্থায়িত্তের জন্য যেমন পরিবেশ দরকার তা হয়তো কখনই পাওয়া যাবেনা, কিন্তু কি কি কারণে ব্যাটারির উপর চাপ পড়ে, সেটি জানা থাকলে ব্যাটারির যত্ন নেয়া সহজ হয়।


মোবাইল পকেটে নিয়ে দৌড়ালে বা গরম আবহাওয়ায় গান শোনা বা বা ব্যাটারি ক্ষয় করে এমন কিছু করা হলে তা ব্যাটারির ক্ষয় আরও বাড়িয়ে দেয়। শুধু গরমই নয়, অতিরিক্ত ঠাণ্ডাও ব্যাটারির জন্য ক্ষতির কারণ। এই ছোটখাটো বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে পারলেই আপনার ব্যাটারি অনেকটা ভালো থাকবে। সব ব্যাটারিই একসময় নষ্ট হবে। তবে আপনি কিভাবে ব্যাটারিটি ব্যবহার করছেন তার উপরই নির্ভর করবে আপনার ব্যাটারির স্থায়িত্ব।


ব্যাটারির স্থায়িত্ব বাড়াতে যা মনে রাখবেন:

ব্যাটারির আদ্যোপান্ত বর্ণনা করে আরেকদিন লিখব। তবে যেকোনো পরিবেসেই ব্যাটারি ঠিক রাখতে নীচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিতঃ


অতিরিক্ত তাপমাত্রা ব্যাটারি নষ্ট করে: শীত প্রধান অঞ্চলের কথা চিন্তা করুন, সেখানে তাপমাত্রা কমে যখন বরফ পড়তে শুরু করে, তখন গাড়ির ব্যাটারিগুলো আর কাজ করেনা। একইভাবে গরম আবহাওয়ার মরুভুমিতেও একই অবস্থা হয় ব্যাটারির। মুলত গাড়ির ব্যাটারি তৈরির কোম্পানিগুলো এরকম বিরুপ আবহাওয়ায় ব্যাটারি যেন কর্মক্ষম থাকে সেই বিষয়েই বেশী জোর দিয়ে থাকে।


আপনার ফোন, ট্যাব বা ল্যাপটপে থাকা ব্যাটারি তৈরির উপাদানগুলো গাড়ির ব্যাটারির চেয়ে ভিন্ন হলেও, দুই ক্ষেত্রেই তাপমাত্রার একটি বড় প্রভাব রয়েছে। তাই ০ ডিগ্রীর নিচে বা ৭০ ডিগ্রীর উপরে তাপমাত্রায় কখনই ব্যাটারি রাখা যাবেনা। আর এ দুটি হল সর্বোচ্চ আর সর্বনিম্ন মাত্রা।


আপনি হয়তো চিন্তা করছেন আপনি যেখানে থাকেন সেখানে এতো গরম বা এতো ঠান্ডার ব্যাপার নেই। কিন্তু যেটা আপনাকে মনে রাখতে হবে তা হল আপনার ডিভাইসটি নিজেই তাপ উৎপন্ন করে, এর স্ক্রিন, সিপিইউ আর ভিতরে থাকা বিভিন্ন চিপগুলো গরম হয়ে এটি হয়। এছাড়া ডিভাইসটি থাকে বদ্ধ একটি খাপের ভেতর, সেই খাপটিও হয়তবা আরেকটি কভার দিয়ে ঢাকা। সব মিলিয়ে বদ্ধ একটা পরিবেশ। আবার আপনি হয়তো আপনার ফোনটি বহন করছেন আপনার পকেটে, যা আপনার শরীরের খুব কাছে। আবার পরিবেশটাও হয়তো বেশ গরম। এমনকি জিপিএস বা ম্যাপ এর অ্যাপ ও যদি আপনি দীর্ঘক্ষণ ব্যাবহার করেন, তা আপনার দিভাইস্কে গরম করে ফেলবে। এসবই ধীরে ধীরে ব্যাটারি ক্ষয় করে দেয়।

একইভাবে অতিরিক্ত ঠাণ্ডাও ব্যাটারির চালিকাশক্তি নষ্ট করে দেয়। অনেক সময় ধরে ঠাণ্ডার মধ্যে স্মার্টফোন ফেলে রাখা ব্যাটারির জন্য ক্ষতিকর।


ব্যাটারি পুরোপুরি খালি করবেন না: এখন যে ব্যাটারিগুলো আমরা ব্যবহার করি তার সবই লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি। আগের নিকেল মেটাল হাইড্রাইড বা নিকেল ক্যাডমিয়াম ব্যাটারিগুলো মেমরি ইফেক্ট বলে একটি ব্যাপার ছিল, যার কারণে ব্যাটারি পুরোপুরি খালি হলে আবার চার্জ করা হত। কিন্তু প্রক্রিয়াটি মোটেই সুবিধাজনক ছিলনা। হয়তো বাইরে বেরুনোর সময় দেখলেন আপনার মোবাইলে চার্জ বাকি আছে ২০%, আপনি এসময় না পারবেন চার্জ দিতে, না পারবেন অপেক্ষা করতে যে কখন চার্জ শেষ হবে, আপনি আবার চার্জ করবেন। যাই হোক, পুরোটাই অবাস্তব। মোটেও ব্যবহার উপযোগী না।


তবে এখনকার লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে এই ঝামেলাটি নেই। আপনার ব্যাটারিতে যতটুকুই চার্জ থাকুক না কেন, আপনি যেকোনো সময়ই চার্জার কানেক্ট করে ফুল চার্জ করে নিতে পারবেন। উপরন্তু, আপনার উচিৎ হবে ২০% এর মধ্যে যখন চার্জ এর পরিমান চলে আসবে তখনই আবার ফুল চার্জ করে নেয়া। আর কখনই ব্যাটারি পুরো খালি করা উচিত না।


আপনার ব্যাটারি পুরো খালি হলে সেটি হয়তো একবারে নষ্ট হবে না। কিন্তু ব্যাটারি একদম খালি করে অনেকদিন ফেলে রাখলে পুনরায় আবার চার্জ দিলে হয়তো দেখা যাবে ব্যাটারি চার্জ ধরে রাখতে পারছেনা। যদি কোন কারণে আপনার মোবাইল সেটটি বেশ কিছুদিন বন্ধ রাখতে চান, তাহলে অন্তত ৫০% চার্জ রেখে বন্ধ রাখুন। এতে ব্যাটারি ভালো থাকবে।


আনপ্লাগ করবেন কি করবেন না: চার্জ নেয়া শেষ হওয়ার পরপরই আনপ্লাগ করবেন কি না এটা নিয়ে বিতর্ক আছে। ল্যাপটপের ক্ষেত্রে প্লাগড ইন রাখা হলেও মোবাইল বা ট্যাব জাতীয় ডিভাইসগুলোর ক্ষেত্রে এটি না করাই ভালো। বিভিন্ন ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে জানা তথ্য অনুযায়ী ১০০% চার্জ হয়ে যাওয়ার পরও চার্জের কানেকশান রেখে দেয়া যন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। অনেকসময় মোবাইল চার্জদিতে বিশেষ ধরনের সকেট ব্যবহার করা যেতে পারে, যা আপনার নির্ধারিত সময়ের পর বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিবে।


স্ক্রিন অ্যাক্টিভিটি ও ব্রাইটনেস: আপনার ডিভাইসের স্ক্রিনের কার্যক্রম চার্জ নষ্টের জন্য অনেকটা দায়ী। আপনার ডিভাইসের ব্যাটারি সেটিংসে গিয়ে স্ক্রিন লেখা বোতামে চাপলেই দেখতে পাবেন স্ক্রিনের জন্য কত শতাংস ব্যাটারি ব্যয় হচ্ছে। ওখানে ডিসপ্লে সেটিংগুলো কিছুটা পরিবর্তন করে আপনি ব্যাটারির ব্যবহার কমাতে পারবেন।




স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কমিয়েও ব্যাটারির খরচ কমানো যায়। স্লাইডিং বারটি টেনে সহজেই আপনি এটি পরিবর্তন করতে পারবেন। আর স্মার্টফোনের কুইক সেটিং প্যানেল থেকে সহজেই ব্রাইটনেস এর বার টি খুঁজে নিতে পারবেন।


ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ, লোকেশন, ৩জি অপশন: আপনার ডিভাইসে ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ, লোকেশন, ৩জি অপশন গুলো থাকেই। আর আপনার প্রতিদিনের ব্যবহার তালিকাতেও এ প্রযুক্তিগুলো থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু ব্যবহার হয় বলে সবসময় অপশনগুলো চালু রাখা ঠিক না। এগুলো অনেকবেশী চার্জ নষ্ট করে তাই এগুলো ব্যবহারে যত্নবান হতে হবে।


জিপিএস এর কথাই ধরুন। আপনি যখন লোকেশন সম্পর্কিত কোন কাজ করবেন তখনই কেবল এর দরকার পড়বে। গুগল নেভিগেশন ব্যবহার করবেন, বা হয়তো ছবিতে তোলার জায়গাটি ট্যাগ করবেন সেক্ষেত্রে হয়তো আপনার লোকেশন অপশনটি ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু কতক্ষণই বা তা লাগে? তাই যখন প্রয়োজন নেই তখন এটি বন্ধ রাখাই ভালো।


জিপিএএস এর মত একই কথা প্রযোজ্য ব্লুটুথের ক্ষেত্রেও। আপনি যদি হেডসেট ব্যবহার করেন বা ব্লুটুথ স্পিকার ব্যবহার করে থাকেন সেক্ষেত্রে ব্লুটুথ প্রয়োজন, কিন্তু সারাদিন তো না। তাই প্রয়োজন ছাড়া এটিও বন্ধ রাখুন। এখন বাকি থাকে আপনার মোবাইলে ডাটা আদান-প্রদানের ব্যবস্থা। আপনি যদি সীমিত ডাটা প্যাকেজ ব্যবহারকারি হন সেক্ষেত্রে আপনি চাইবেন যখন সম্ভব তখন ওয়াই-ফাই ব্যবহার করতে। কিন্তু আপনি যদি এজন্য সবসময়ই ওয়াই-ফাই চালু রাখেন, তখন ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক এর বাইরে আসলে স্বয়ংক্রিয় ভাবে মোবাইল ডাটা চালু হয়ে যেতে পারে, এতে আপনার ডাটা প্যাকেজের যেমন অপচয় হবে তেমনি মোবাইলের চার্জও নষ্ট হবে। ওয়াই-ফাই বন্ধ রাখাই ভালো।


মোবাইল ডাটা বা ৩জি যেভাবেই বলিনা কেন, ব্যবহারের সময় ছাড়া চালু রাখলে অযথা ডাটা খরচ হবে। অপ্রয়োজনীয় আপডেট হবে যা আপনার অজান্তেই ডাটা প্যাকেজ খরচ করবে আর চার্জ নষ্ট করবে।


ব্যাটারি সেটিংস: এবার তাহলে দেখি কোন অ্যাপ্লিকেশনে ব্যাটারির কি পরিমান খরচ হয়। সেটিংস এর ব্যাটারি অপশনে গেলে নিচের ছবির মত স্ক্রিন আসবে। এখানে কোন অ্যাপ্লিকেশন কতটা চার্জ ব্যবহার করছে তা দেখা যাবে। এখানে দেখা যাচ্ছে স্ক্রিন সবচেয়ে বেশি চার্জ নেয় আর এরপরই আছে ম্যাপ। ম্যাপের অ্যাপটিতে ক্লিক করলে নিচের ছবির মত উইন্ডো আসবে। এখানে অ্যাপটি কতক্ষন ব্যবহার হয়েছে তার বিস্তারিত দেখা যাবে। আর এখানে একদম নিচে থাকা লোকেশন বাটনে ক্লিক করে “ লো ব্যাটারি ইউজ” সিলেক্ট করে ব্যাটারি ব্যবহার কমানো যাবে।




আশা করছি এত কিছু আলোচনার পর ব্যাটারি সম্পর্কে কিছু ধারণা হয়েছে আপনার। ব্যাটারি আজীবন ভালো থাকবেনা। এমনও হতে পারে আপনার ডিভাইসটি সম্পুরন কার্যকর আছে কিন্তু ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে যতটা সম্ভব কার্যকর রাখতে আমাদের যত্নবান হতে হবে। একটু বাড়তি যত্ন আপনার ব্যাটারিকে ভাল রাখবে অনেকদিন। পারফর্মেন্সও ভালো থাকবে।

Talk Doctor Online in Bissoy App

জি ভাই ঠিক বলেছেন। আমিও

এই সমস্যার ভুক্তভোগী।

অবশ্য আমার মোবাইলটি ওয়ালটন

প্রিমো ডি৭। তবুও আমি একই

সমস্যায় পরেছিলাম।

আসোল ঘটনা হচ্ছে যে-

আপনার আমার এই সমস্ত মোবাইলে

নাকি ব্যাটারির কানেকশনটা dependent on

network সিস্টেম। অর্থাৎ যতক্ষণ মোবাইলে

সিম কানেকশন থাকবে ততক্ষণই চার্জ

শেষ হতে থাকবে। যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে

মোবাইলটি flight mood এ রেখে দিন ঘন্টা খানেক।

দেখবেন একটুকুও চার্জ শেষ হবে না।

যাহোক, এখন করনীয় হিসেবেঃ

ব্রাইটনেস একদম কমিয়ে রাখুন, 

অযথা ডাটা কানেকশন অন রাখেবেন না,

কাজ শেষে ram ক্লিয়ার করে রাখুন,

ব্যাটারির চার্জ একদম শেষ না করে

কিছুক্ষন পরপর চার্জ দিন,

আশাকরি কিছুটা হলেও মুক্তি পাবেন।

Talk Doctor Online in Bissoy App