শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Sumya Akter

Call

ইসলামী শরীআতের চিন্তার সীমাহীন নীলিমায় বিশাল এক আলােকপথ হানাফী ফিকহ শাস্ত্র । আজকের বিশ্বের দেড়শত কোটি মুসলমানের শতকরা পঁচাত্তর জনই তাঁর প্রণীত ফিকহী মাযহাবের অনুসারী। হানাফী ফিকহের কতিপয় বৈশিষ্ট্য এখানে তুলে ধরা হল :

(১) আল-কুরআনের গুরুত্ব

হানাফী ফিকহের মূলভিত্তি হলাে আল-কুরআন। আল-কুরআনের উপস্থিতিতে হাদীসের আশ্রয় খুব কম নিতেন।

(২) হিকমত ভিত্তিক ফিকহ

ইমাম আবু হানীফার (র) ফিকহ'র প্রত্যেকটা মাস'আলা, তত্ত্ব, তথ্য, হিকমত ও মানুষের কল্যাণকারিতার উপর পর্যালােচনার ভিত্তিতে গৃহীত হতাে। যেমন অন্যান্য ইমামগণ যখন সালাত বা অন্যান্য ফরয বিষয়কে এজন্য ফরয মনে করতেন যে, শরীআত প্রবর্তকের নির্দেশ। কিন্তু ইমাম আবু হানীফা (র) সালাত বা অন্যান্য ফরযসমূহের কল্যাণকারিতার দৃষ্টিকোণ যাচাই করতেন। যেমন সালাত সম্বন্ধে বলা হয়েছে-

“সালাত মন্দ ও অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখে।”

এমনিভাবে সাওমের উপকারিতা হলাে তাকওয়া অর্জন।

(৩) সরল-সহজ ফি

হানাফী ফিকহ অন্যান্য মাযহাব অপেক্ষা খুবই সহজ-সরল, যা সাধারণত মানুষের জন্য কল্যাণকর। মানুষের সাধ্য ও সামর্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখেই এ মাযহাব প্রণীত হয়েছে। চোরের হাত কাটার হুকুম প্রসঙ্গে-

* হানাফী ফিক্‌হ মতে ন্যূনতম এক আশরাফী বা স্বর্ণমুদ্রা বা ঐ পরিমাণ অর্থ চুরি না করলে হাত কাটা যাবে না।

* অন্যান্য ইমামের মতে ন্যূনতম ১/৪ স্বর্ণমুদ্রা চুরি করলেই হাত কাটা যাবে। এই মতামত বিশ্লেষণ করলে বােঝা যায়, হানাফী ফিকহ মানব কল্যাণকর এবং সহজ-সরল ।

(৪) মানবিক আবেদন।

সাধারণ মানুষের পার্থিব প্রয়ােজনাদি তথা লেনদেন ও আচার আচরণের ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফা (র) মানবিক আবেদনে সাড়া দিয়ে অন্তর্দৃষ্টি ও উপলব্ধির সাথে সমাধান দিয়েছেন। অথচ অন্যান্য ইমামগণ তার বিপরীতে বাহ্যিক নস ও প্রকাশ্য কিয়াস দ্বারা মাস'আলা ও সমস্যার সমাধান করেছেন। যেমন বিবাহের ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফা (র)-এর মতে কন্যা নিজ বিবাহের ব্যাপারে মত প্রকাশে পুরুষের ন্যায় স্বাধীন। অন্যান্য ইমামের মতে কন্যা স্বাধীন নয়।

(৫) অমুসলিমদের স্বাধীনতা দানকারী

হানাফী ফিকহ্ ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিম জিম্মীদেরকে উদার দৃষ্টিতে গ্রহণ করে তাদের অধিকার নিশ্চিত করে। যেমন- হানাফী ফিকহ্ মতে যিম্মির রক্ত মুসলমানদের ন্যায় নিরাপদ। অর্থাৎ, যিম্মীকে হত্যার অপরাধে কিসাস তথা মৃত্যু দণ্ডাদেশ দেওয়া যাবে ।

* ইমাম শাফি'ঈ (র)-এর মতে যিম্মীকে হত্যা করার অপরাধে দিয়াত রক্তমূল্য ওয়াজিব হবে, মৃত্যুদণ্ড নয়। আবার ইমাম মালিকের (র) মতে দিয়াতের অর্ধেক ওয়াজিব ।

(৬) শক্তিশালী মত গ্রহণ।

হানাফী ফিকহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলাে কুরআন ও হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত বিষয়ে মতামত গ্রহণের ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফা (রা) শক্তিশালী মত গ্রহণ করেন। যেমন- উযুর ক্ষেত্রে।

* ইমাম আবু হানীফার (র) মতে উফুর ফরয ৪টি, যা কুরআনে উল্লিখিত হয়েছে।

* ইমাম শাফি'ঈ (র)-এর মতে উযূর ফরয ৬টি।

(৭) কিয়াসের উপর গুরুত্ব আরােপ

ইমাম আবু হানীফা (র) ফিকহের ক্ষেত্রে কিয়াসের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করেছেন। কিয়াস ভিত্তিক রায় প্রদানে ইমাম আবু হানীফা (র) যুক্তিগ্রাহ্য ও শক্তিশালী মতামত গ্রহণ করতেন।

(৮) সর্বজনীন ও ভারসাম্যপূর্ণ

ইমাম আবু হানীফার (র) ফিকহ্-এর সার্বিক শ্রেষ্ঠত্বের অন্যতম কারণ হলাে-এটা সর্বজনীন ও ভারসাম্যপূর্ণ ফিকহ। এ মাযহাবে গোঁড়ামী আবার উঁচুমানের জটিল দার্শনিক তত্ত্ব পরিহার করা হয়েছে। হাদীস, পারিপার্শ্বিকতা ও প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে কিয়াস ও ইসতিহসান-এর ভিত্তিতে সর্বজন গ্রাহ্য করে সমাধান প্রণীত হয়েছে।

এ সব কারণে হানাফী ফিকহ মুসলিম মিল্লাতের নিকট সর্বশ্রেষ্ঠ মাযহাব। পৃথিবীর সকল মুসলমানের শতকরা ৭৫ জন এই হানাফী ফিকহের অনুসারী হয়ে সীরাতুল মুস্তাকীমের পথে আছে। হানাফী মাযহাবের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ এখানেই।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ