Call

রমজান মাস যে মাসে অবতীর্ণ হয়েছে আল-কুরআন, যা মানবজাতির জন্য হেদায়াত এবং হেদায়াতের সুষ্পষ্ট নিদর্শন এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী বিধান। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে এই মাসটি পাবে, সে রোজা রাখবে। আর যে অসুস্থ অথবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গননা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না, যাতে তোমরা গননা পূরণ করো এবং তোমাদের হেদায়াত দান করার দরুন আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো। [সূরা বাকারাহ : ১৮৫] ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম ফরজ ইবাদত হলো সিয়াম বা রোজা পালন করা। মহান আল্লাহ রমজান মাসে সিয়াম পালনকে আমাদের উপর অত্যাবশকীয় করে দিয়েছেন এই জন্য যে এই মাসে অবতীর্ণ হয়েছে পবিত্র আল-কুরআন যা বিশ্ববাসীর জন্য হেদায়াত এবং নিদর্শন ও সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী বিধান গ্রন্থ। নিজ কু-প্রবৃত্তিকে দমন ও আত্মশুদ্ধির সর্বোত্তম মাস হলো রমজান। প্রথমত সিয়াম সাধনায় আল্লাহর নির্দেশ পালন করা হয়। দ্বিতীয়, রোজা দ্বারা সংযমী হওয়া যায়। তৃতীয়, রোজা দ্বারা অতীতের গুনাহসমূহ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। পারতপক্ষে আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনের সর্বোত্তম পন্থা হলো সিয়াম সাধনা। মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন- ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢُ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﻛَﻤَﺎ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦْ ﻗَﺒْﻠِﻜُﻢْ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗَﺘَّﻘُﻮﻥَ হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর। [সূরা বাকারা : ১৮৩] উক্ত আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, সিয়াম সাধনার দ্বারা তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জিত হয়। এই পবিত্র মাসকে পূর্ণভাবে আল্লাহর রহমত, বরকত ও নাজাত প্রাপ্তির জন্য আমাদের কিছু করণীয় আছে এবং সেই সাথে কিছু বর্জনীয় কার্যাবলী রয়েছে যা পরিত্যাগ করার মাধ্যমে আমরা রমজান মাসকে কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী পালন করতে পারব। রমজান আমাদেরকে সংযমী হওয়ার শিক্ষা দেয়। শুধুমাত্র পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে দিনের বেলায় বিরত থাকাই সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য নয়। প্রকৃতপক্ষে রমজান মাসে সার্বক্ষণিক নিজের কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে প্রকৃত তাকওয়া অর্জন করা সম্ভব। আমাদের ভুলে গেলে হবে না যে, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়টুকু রোজার অন্তুর্ভূক্ত নয়; বরং দিন ও রাত্রি উভয় সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে সিয়াম সাধনার প্রকৃত আত্মতৃপ্তি লাভ করা সম্ভব। সিয়াম সাধানার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি হালাল খাদ্য ও পানীয়কে আল্লাহর নির্দেশের কারণে বর্জন করে প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করে। সেই সাথে তারাবীহ, তাহাজ্জুদ, দান-সদকাহ, কুরআন তিলাওয়াতসহ অন্যান্য ইবাদত করার মাধ্যমে তার আত্মার পরিশুদ্ধতা অর্জিত হয়। পবিত্র রমজান মাসে হাদিসে উল্লেখিত কতিপয় আমল দ্বারা আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারি : ১. আল্লাহর সন্তুষ্টি ও রহমত লাভের উদ্দেশ্যে সিয়াম সাধনা করা: ﻋﻦ ﺍﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿـ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﺇﺫ ﺩﺧﻞ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻓﺘﺤﺖ ﺃﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﺴﻤﺎﺀ ﻭﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﻓﺘﺤﺖ ﺃﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻭﻋﻠﻘﺖ ﺃﺑﻮﺍﺏ ﺟﻬﻨﻢ ﻭﺳﻠﺴﻠﺖ ﺍﻟﺸﻴﺎﻃﻴﻦ ﻭﻓﻰ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﻓﺘﺤﺖ ﺃﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﺮﺣﻤﺔ . হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন, যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। অপর বর্ণনায় রয়েছে বেহেশতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয় এবং শয়তানকে শৃংখলিত করা হয়। অপর বর্ণনায় আছে, রহমতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। [বুখারী ও মুসলিম] রমজান মাসে যেহেতু বেহেশতের ও রহমতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় সেহেতু রোজা রেখে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁর রহমতের আশা করব। ২. মুখ ও জিহ্বাকে সংযত রাখা পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি নিজের মুখ ও জিহ্বাকে সংযত রাখতে হবে। মিথ্যা, অশ্লীল কথাবাতা, গালিগালাজ, গীবত, পরনিন্দা, অভিশাপ দেয়া ও চোগলখোরীসহ অন্যান্য অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। হাদিসে এসেছে- ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ – ﺭﺿـ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻣﻦ ﻟﻢ ﻳﺪﻉ ﻗﻮﻝ ﺍﻟﺰﻭﺭ ﻭﺍﻟﻌﻤﻞ ﺑﻪ ﻓﻠﻴﺲ ﺍﻟﻠﻪ ﺣﺎﺟﺔ ﻓﻰ ﺃﻥ ﻳﺪﻉ ﻃﻌﺎﻣﻪ ﻭﺷﺮﺍﺑﻪ . অবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও মিথ্যা কর্ম পরিত্যাগ করেনি, তার পানাহার ছেড়ে দেয়াতে আল্লাহর কোন কাজ নেয়। [মিশকাত : ১০৮৯, বুখারী] ৩. নিয়মিত তারাবীহর নামাজ আদায় করা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তারাবীহ পড়তে হবে। কেননা, যে ব্যক্তি রমজানে তারাবীহ নামাজ পড়বে তার অতীতের সগীরা গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। হাদিসে এসেছে- ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ – ﺭﺿـ – ﻗﺎﻝ : ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺮﻏﺐ ﻓﻰ ﻗﻴﺎﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻣﻦ ﻏﻴﺮ ﺍﻥ ﻳﺄﻣﺮﻫﻢ ﻓﻴﻪ ﺑﻌﺰﻳﻤﺔ ﻓﻴﻘﻮﻝ ﻣﻦ ﻗﺎﻝ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺇﻳﻤﺎﻧﺎ ﻭﺍﺣﺘﺴﺎﺑﺎ ﻏﻔﺮﻟﻪ ﻣﺎ ﺗﻘﺪﻡ ﻡ ﺫﻧﺒﻪ . হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সা. রমজান মাসের নামাজ কাযেম করার জন্য উৎসাহ দান করতেন; কিন্তু তিনি এ বিষয়ে খুব তাকীদ করতেন না। বরং এরূপ বলতেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের নিয়তে রমজান মাসে নামায কায়েম করবে তার পূর্ববর্তী (সগীরা) গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে। [মুসলিম] ৪. কুরআন তিলাওয়াত করা : নফল ইবাদতের মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত হলো কুরআন তিলাওয়াত করা। যেমন হযরত নুমান বিন বাশির রা. হতে বর্ণিত নবী করীম সা. ইরশাদ করেন – ﺃﻓﻀﻞ ﻋﺒﺎﺩﺓ ﺃﻣﺘﻰ ﺗﻼﻭﺓ ﺍﻟﻘﺮﺃﻥ আমার উম্মতের সবচেয়ে উত্তম ইবাদত কুরআন তিলাওয়াত করা। [বায়হাকী, শুআবুল ঈমান :হা. ১৮৬৯, মুসনাদুস শিহাব : ১১৯৫] অন্য হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি রমজান মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি নফল কাজ করবে সে ঐ ব্যক্তির সমান হলো যে, অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। [মিশকাত :১৮৬৮] সুতরাং রমজান মাসে কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আমরা অধিকতর সওয়াবের অধিকারী হবো। ৫. বেশি করে দান-সদকাহ করা মহান আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন- ﻣَﺜَﻞُ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﻨْﻔِﻘُﻮﻥَ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻬُﻢْ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻛَﻤَﺜَﻞِ ﺣَﺒَّﺔٍ ﺃَﻧْﺒَﺘَﺖْ ﺳَﺒْﻊَ ﺳَﻨَﺎﺑِﻞَ ﻓِﻲ ﻛُﻞِّ ﺳُﻨْﺒُﻠَﺔٍ ﻣِﺌَﺔُ ﺣَﺒَّﺔٍ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻳُﻀَﺎﻋِﻒُ ﻟِﻤَﻦْ ﻳَﺸَﺎﺀُ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺍﺳِﻊٌ ﻋَﻠِﻴﻢٌ . যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মতো, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। আর আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা করেন (সওয়াবে) কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ অতি প্রাচুর্যময় (এবং) সর্বজ্ঞ। [সূরা বাকারাহ : ২৬১] ৬. নিজে ইফতার করার পাশাপাশি রোজাদারদের ইফতার করানো হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ﻋﻦ ﺯﻳﺪ ﺑﻦ ﺧﺎﻟﺪ ﺍﻟﺠﻬﻨﻲ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﻦ ﻓﻄﺮ ﺻﺎﺋﻤﺎ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﻣﺜﻞ ﺃﺟﺮﻩ ﻏﻴﺮ ﺃﻧﻪ ﻻ ﻳﻨﻘﺺ ﻣﻦ ﺃﺟﺮ ﺍﻟﺼﺎﺋﻢ ﺷﻴﺊ . হযরত যায়েদ বিন খালেদ জুহানী রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করালো তাকে রোজাদারের অনুরূপ সওয়াব দান করা হবে। কিন্তু রোজাদারের সওয়াবের কোন কমতি হবে না। [তিরমিযী : ৮০৭] ৭. মিসওয়াক করা : হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﺎﻣﺮ ﺑﻦ ﺭﺑﻴﻌﺔ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻗﺎﻝ ﺭﺃﻳﺖ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﺎ ﻻ ﺃﺣﺼﻲ ﻳﺘﺴﻮﻙ ﻭﻫﻮ ﺻﺎﺋﻢ . আব্দুল্লাহ বিন রবিআ রা. তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সা. কে রোজা অবস্থায় অসংখ্যবার মিসওয়াক করতে দেখেছি। [তিরমিযী: হা.৭২৫] ৮. শীঘ্রই ইফতারী করা হাদিস শরীফে এসেছে – ﻋﻦ ﺳﻬﻞ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻻ ﻳﺰﺍﻝ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺑﺨﻴﺮ ﻣﺎ ﻋﺠﻠﻮ ﺍﻟﻔﻄﺮ . হযরত সাহল ইবনে সা’দ রা. বলেন, আল্লাহ রাসূল সা. বলেছেন, মানুষ কল্যানের সাথে থাকবে যতকাল তারা শীঘ্রই ইফতার করবে। [বুখারী ও মুসলিম] অন্য হাদিসে আছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দাদের মধ্যে আমার কাছে তারাই বেশি প্রিয় যারা শীঘ্রই ইফতারী করে। [তিরমিযী, মিশকাত : ১৮৯৬] ৯. ইফতারের পূর্বে ও ইফতারের সময় দোয়া করা হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. যখন ইফতার করতেন নিম্নের দোয়াটি পড়তেন : ﺍﻟﻠﻬﻢ ﻟﻚ ﺻﻤﺖ ﻭﻋﻠﻰ ﺭﺯﻗﻚ ﺃﻓﻄﺮﺕ ﺗﻘﺒﻞ ﻣﻨﻲ ﺇﻧﻚ ﺃﻧﺖ ﺍﻟﺴﻤﻴﻊ ﺍﻟﻌﻠﻴﻢ . হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমার রিজিক দিয়ে ইফতার করছি। তুমি আমার এই রোজাকে কবুল কর। নিশ্চয় তুমি সর্বজ্ঞ, সর্বশ্রোতা। [তাবারানী : ৮৪৫] ১০. বেশি করে ইসতেগফার ও দোয়া করা এই রমজান মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত্রি হলো লাইলাতুল কদর। হাদিস মোতাবেক রমজানের শেষের দশদিন বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করার কথা বলা হয়েছে। এই জন্য যে মহান আল্লাহ দেখতে চান লাইলাতুল কদরের বরকত ও ফজিলত লাভের উদ্দেশ্যে তার কোন বান্দা বেশি ইবাদত করে। রাসূল সা. এই শেষ দশকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন তা নিম্নোক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূল সা. কে লাইলাতুল কদরের কথা জিজ্ঞাসা করলাম, আজ কি দোয়া পাঠ করব? তিনি বললেন নিম্নের দোয়াটি পাঠ করবে: ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺇﻧﻚ ﻋﻔﻮ ﺗﺤﺐ ﺍﻟﻌﻔﻮ ﻓﺎﻋـﻒ ﻋﻨﻰ . হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই তুমি ক্ষমাশীল। তুমি ক্ষমাশীলতাকে ভালবাস। অতএব আমাকে ক্ষমা করো। [তিরমিযী : হা. ৩৫১৩, মুসনাদে আহমদ : ১/১৭১] ১১. খেজুর অথবা পানি দিয়ে ইফতার করা হযরত সালমান আমের রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে, কেননা এতে বরকত রয়েছে। যদি খেজুর না পায়, তবে যেন পানি দ্বারা ইফতার করে, এটি পবিত্রকারী। [আহমদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, দারেমী] ১২. সেহরী খেয়ে রোজা রাখা সেহেরী খাওয়া সুন্নত। সেহেরী খেয়ে রোজা রাখার মধ্যে বরকত নিহিত রয়েছে। হাদিস শরীফে এসেছে- ﻋﻦ ﺃﻧﺲ – ﺭﺿـ – ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﺗﺴﺤﺮﻭﺍ ﻓﺈﻥ ﻓﻰ ﺍﻟﺴﺤﻮﺭ ﺑﺮﻛﺔ . আনাস বিন মালেক রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন- তোমরা সেহেরী খাবে। কেননা, সেহরীতে বরকত রয়েছে। [বুখারী, মুসলিম] ১৩. মসজিদে এতেকাফ করা রমজানের শেষের দশদিনে এতেকাফ করা সুন্নত। পুরুষরা মসজিদে এবং স্ত্রীলোকেরা আপন ঘরে একটি স্থান ঘিরে নিয়ে তথায় এতেকাফ করবে। হাদিসে এসেছে- ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ - ﺭﺿـ – ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻛﺎﻥ ﻳﻌﺘﻜﻒ ﺍﻟﻌﺸﺮ ﺍﻷﻭﺍﺧﺮ ﻣﻦ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺣﺘﻰ ﺗﻮﻓﺎﻩ ﺍﻟﻠﻪ، ﺛﻢ ﺍﻋﺘﻜﻒ ﺃﺯﻭﺍﺟﻪ . হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত যে, নবী করীম সা. রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করতেন, যাবৎ না আল্লাহ তাকে উঠিয়ে নিয়েছেন এবং তাঁর পর তাঁর স্ত্রীগণও এতেকাফ করেছেন। [বুখারী ও মুসলিম] ১৪. বেশি বেশি করে নফল নামাজ আদায় করা হাদিস মোতাবেক রমজান মাসে একটি নফল ইবাদত করলে একটি ফরজ ইবাদতের সমান মর্যাদা পাওয়া যায়। হাদিসে এসেছে, হযরত আলী রা. বলেন, আমাকে হযরত আবু বকর রা. বলেছেন আর তিনি সত্য বলেছেন তিনি বলেছেন আমি রাসূল সা.কে বলতে শুনেছি যে, কোন ব্যক্তি গুনাহ করবে অতঃপর ওঠে আবশ্যকীয় পবিত্রতা লাভ করবে এবং নফল নামাজ পড়বে; তৎপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। [তিরমিযী, ইবনে মাজাহ] ১৫. বেশি করে আল্লাহর জিকির ও তাসবীহ-তাহলীল করা রমজান মাসে বেশি করে তাসবীহ পাঠ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্ঠা করতে হবে। মহান আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন , ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺇِﺫَﺍ ﻓَﻌَﻠُﻮﺍ ﻓَﺎﺣِﺸَﺔً ﺃَﻭْ ﻇَﻠَﻤُﻮﺍ ﺃَﻧْﻔُﺴَﻬُﻢْ ﺫَﻛَﺮُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻓَﺎﺳْﺘَﻐْﻔَﺮُﻭﺍ ﻟِﺬُﻧُﻮﺑِﻬِﻢْ ﻭَﻣَﻦْ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ﺇِﻻ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﻟَﻢْ ﻳُﺼِﺮُّﻭﺍ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﻓَﻌَﻠُﻮﺍ ﻭَﻫُﻢْ ﻳَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ . আর যারা কোন অশ্ল¬ীল কাজ করে অথবা নিজেদের প্রতি যুলুম করে আল্ল¬াহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্ল¬াহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে ? আর তারা যা করেছে, জেনে শুনে তা তারা বার বার করে না। [সূরা আল-ইমরান : ১৩৫] ১৬. রমজান মাসে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করা রমজান মাসের শেষের দশদিনের বেজোড় রাত্রিতে লাইলাতুল কদরের জন্য বেশি করে আল্লাহর ইবাদত করতে হবে এবং সারা বিশ্ববাসীর শান্তি, ক্ষমা ও স্থিতিশীলতার জন্য দোয়া করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ﻟَﻴْﻠَﺔُ ﺍﻟْﻘَﺪْﺭِ ﺧَﻴْﺮٌ ﻣِﻦْ ﺃَﻟْﻒِ ﺷَﻬْﺮٍ লাইলাতুল কদর এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। [সূরা কদর : ৩] ১৭. রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করা : রমজান মাসে এমন কিছু করা যাবে না যা শরীয়তপরিপন্থী। যেমন রোজাদারহীন ব্যক্তি রোজাদারদের সামনে পানাহার করা। সেই সাথে অশ্লীল ও অনৈতিক কার্যাবলী থেকে বিরত থাকতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন- ﻭَﻻ ﺗَﻘْﺮَﺑُﻮﺍ ﺍﻟْﻔَﻮَﺍﺣِﺶَ ﻣَﺎ ﻇَﻬَﺮَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻭَﻣَﺎ ﺑَﻄَﻦَ . আর অশ্লীল কাজের নিকটবর্তী হবে নাÑ তা থেকে যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে। [সূরা আন-আম : ১৫১] পরিশেষে বলতে চাই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত ও সৎকর্মের মাধ্যমে এই রমজানের ফজিলত আমরা পূর্ণভাবে অর্জন করতে পারি। মহান আল্লাহ এই রমজান মাসে আমাদের উপর রহমত, রবকত ও মাগফেরাত প্রদান করুন এবং আমাদের জাহান্নাম থেকে নাজাত প্রদান করুন। আমিন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

মাহে রমযানে আমাদের করনীয় ও বর্জনীয় কাজসমূহ আরবী মাস সমূহের শ্রেষ্ঠ মাস হলো, পবিত্র রমযান মাস । এ মাস কল্যাণময় মাস, কুরআন নাযিলের মাস, রহমত বরকত ও মাগফিরাত এবং নাজাতের মাস । এ মাস তাকওয়া ও সংযম প্রশিক্ষণের মাস, সবর ও ধর্য্যের মাস। এ মাস জীবনকে সমস্ত পাপ পংকিলতা থেকে মুক্ত করে মহান আল্লার রেজামন্দি ও নৈকট্য লাভের মাস । ইরশাদ হয়েছেÑ “রমযান মাস – এ মাসে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কুরআন নাযিল হয়েছে । সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে তারা যেন এ মাসে সিয়াম তথা রোযা পালন করে ।” ( সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৫ ) রমযানের বৈশিষ্ট্য রমযানের বৈশিষ্ট্য অনেক । নি¤েœ কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে দেয়া হলো Ñ ১. আল্লাহ তা’আলা প্রত্যহ জান্নাতকে সুসজ্জিত করে বলেন, অনতিবিলম্বে আমার নেক বান্দারা দুনিয়াবী বিপদ- মুসিবত এড়িয়ে তোমার মাঝে এসে পৌঁছবে । ২. রমযান মাসে শয়তানকে সিকলে বেঁধে রাখা হয় । ৩. রমযান মাসে জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে রাখা হয় । ৪. রমযান মাসে একটি বরকতময় রাত আছে যা হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ । আর তা হলো- লাইলাতুল কদর । ৫. রমযানের শেষ রাতে সমস্ত রোযাদারদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হয় । ৬. রমযানের প্রতি রাতে জাহান্নাম থেকে অনেক লোককে মুক্তি দেয়া হয় । ৭. রমযানে বান্দার নেকী দশ হতে সাতশতগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে দেয়া হয় । যাদের উপর রোযা রাখা ফরজ যাদের মাঝে নি ¤েœাক্ত শর্তাবলী পাওয়া যাবে , তার উপর রমযান মাসের রোযা যথা সময়ে আদায় করা এবং যথা সময়ে আদায় করতে না পারলে কাযা আদায় করা ফরয। ১. বালেগ হওয়া । সুতরাং নাবালেগের উপর রোযা ফরজ নয় । ২. মুসলমান হওয়া । সুতরাং কাফিরের উপর রোযা ফরজ নয় । ৩. জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া । সুতরাং পাগলের উপর রোযা ফরজ নয় । ৪. দারুল ইসলামের অধিবাসী হওয়া অথবা দারুল হরবে থাকলেও রোযা ফরজ হওয়ার ব্যাপারে জ্ঞাত থাকা । ৫. মুকীম হওয়া । সুতরাং মুসাফিরের জন্য রোযা রাখা ফরজ নয় । ৬. সুস্থ থাকা । সুতরাং অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রোযা রাখা ফরজ নয় । ৭. মহিলারা হায়েয নেফাস থেকে মুক্ত থাকা । রোযার নিয়ত নিয়ত ব্যতীত রোযা হয় না । নিয়তের স্থল হলো অন্তর । রাত থেকে শুরু করে (শরীয়তগ্রাহ্য) দিনের অর্ধেক অংশের পূর্ব পর্যন্ত ( অর্থাৎ সুবহে সাদেক ও সূর্যাস্তের ঠিক মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত , যা সূর্য মধ্যগগণে স্থির হওয়ার ৪০/৪৫ মিনিট পূর্বে হয় ) রোযার নিয়ত করা শুদ্ধ । রোযাদারের জন্য যেসব কাজ করা মাকরুহ নয় রোযাদারের জন্য নি ¤েœাক্ত কাজগুলো করা মাকরুহ নয় । ১. গোঁফে ও দাড়িতে তেল লাগানো । ২. সুরমা লাগানো । ৩. শীতলতা লাভের উদ্দেশ্যে গোসল করা । ৪. শীতলতা লাভের উদ্দেশ্যে ভেজা কাপড় গায়ে জড়ানো । ৫. রোযা রেখে দিনের শেষভাগে মিসওয়াক করা সুন্নত, যেমন প্রথমভাগে করা সুন্নত । মুস্তাহাব কাজসমূহ ১. সময়মত সাহরী খাওয়া । সাহরীর সময়ের শেষ ভাগে খাওয়া । ২. সূর্যাস্তের পর বিলম্ব না করে ইফতার করা । ৩. রাতে বড় নাপাকি হলে ফজরের পূর্বেই গোসল করে পাক হওয়া । ৪. গীবত, পরনিন্দা ও গালি-গালাজ থেকে জিহবাকে সংযত রাখা । ৫. রমযানের সূবর্ণ সুযোগকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো, অর্থাৎ কুরআন তেলাওয়াত , যিকির, ইত্যাদিতে লিপ্ত থাকা,উত্তেজিত না হওয়া । ৬. যথাসম্ভব এ মাসের রাতে ( বৈধ হলেও ) সহবাস হতে নিজেকে বিরত রাখা । ৭. ক্রোধান্বিত না হওয়া এবং তুচ্ছ কোন বিষয় নিয়ে উত্তেজিত না হওয়া । যেসব কারণে রোযা ভাঙ্গে না এবং মাকরুহ হয় না ১. মেসওয়াক করা । ২. শরীর, মাথা, দাড়ি এবং গোঁফে তেল লাগানো । ৩. চোখে সুরমা বা ঔষধ লাগানো । ৪. খুশবু লাগানো বা তার গ্রাণ নেয়া । ৫. ভুলে কিছু পান করা ,আহার করা এবং স্ত্রী সহবাস করা । ৬. গরম বা পিপাশার কারণে গোসল করা বা বারবার কুলি করা । ৭. অনিচ্ছাবশত: গলায়র মধ্যে ধোঁয়া, ধুলা-বালি-মাছি ইত্যাদি প্রবেশ করা । ৮. কানে পানি দেয়া বা অনিচ্ছাবশত চলে যাওয়ার কারণে রোযা ভঙ্গ হয় না । তবে ইচ্ছাকৃতভাবে দিলে সতর্কতা হলো সে রোযাটি কাযা করে নেয়া । ৯. অনিচ্ছাকৃত বমি করা । ১০. স্বপ্নদোষ হওয়া । ১১. মুখে থুথু আসলে গিলে ফেলা । ১২. ইনজেকশন বা টিকা নেয়া । ১৩. দাঁত উঠালে এবং রক্ত পেটে না গেলে । ১৪. পাইরিয়া রোগের কারণে অল্প অল্প করে রক্ত বের হলে । ১৫. সাপ ইত্যাদি দংশন করলে । ১৬. পান খাওয়ার পর ভালভাবে কুলি করা সত্ত্বেও থুথুর সাথে লালভাব থাকলে । ১৭. উত্তেজনার সাথে শুধু দৃষ্টিপাত করতেই বীর্যপাত হলে । ১৮. ইনজেকশনের সাহায্যে শরীর থেকে রক্ত বের করলে । যেসব কারণে রোযা নষ্ট হয় ১. নাক বা কানে ঔষধ প্রবেশ করালে । ২. ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করলে । ৩. কুলি করার নসয় গলায় পানি চলে গেলে । ৪. নারী স্পর্শ বা এসংক্রান্ত কোন কারণে বীর্যপাত হলে । ৫. খাদ্য বা খাদ্য হিসেবে গণ্য এমন কোন বস্তু গিলে ফেললে । ৬. আগরবাতি ইচ্ছা করে গলা বা নাকের মধ্যে প্রবেশ করালে । ৭. বিড়ি সিগারেট পান করলে । ৮. ভুলে খেয়ে ফেলার পর ইচ্ছা করে পুনরায় খাবার খেলে । ৯. সুবহে সাদেকের পর খাবার খেলে । ১০. বুঝে হোক বা না বুঝে সূর্য ডুবার আগে ইফতার করলে । ১১. ইচ্ছা করে স্ত্রী সহবাস করলে । যেসব কারণে রোযা মাকরূহ হয় ১. বিনা কারণে চিবিয়ে লবণ বা কোন বস্তুর ঘ্রাণ গ্রহণ করা , যেমন টুথপেষ্ট । ২. গোসল ফরজ অবস্থায় সরাসরি গোসল না করে থাকা । ৩. শরীরের কোথাও শিঙ্গা ব্যবহার করা বা রক্তপাত করানো । ৪. পরনিন্দা করা । ৫. ঝগড়া করা । ৬. রোযাদার নারী ঠোটে রঙ্গিন জাতীয় কোন বস্তু লাগালে যা মুখের ভেতর চলে যাওয়ার আশংকা রয়েছে । ৭. রোযা অবস্থায় দাঁত উঠানো বা দাঁতে ঔষধ ব্যবহার করা , তবে একান্ত প্রয়োজনে তা জায়েয । সাহরী প্রসঙ্গ রোযা রাখার নিয়তে শেষ রাতে খাদ্য গ্রহণ করাকে সাহরী বলা হয় । সাহরী খাওয়া সুন্নত । সুবহে সাদেকের একটু পূর্বে সাহরী খাওয়া মুস্তাহাব । রাসূল সা. বলেন- ﺗﺴﺤﺮﻭﺍ ﻓﺎﻥ ﻓﯽ ﺍﻟﺴﺤﻮﺭ ﺑﺮڪﺔ “ তোমরা সাহরী খাও, এতে অত্যন্ত বরকত নিহীত আছে ” ( মুসলিম শরীফ – ১/৩৫০ ) ইফতার প্রসঙ্গ সূর্যাস্তের পর পরই ইফতার করা উত্তম । রাসূল সা. বলেন- ﻻ ﻳﺰﺍﻝ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺑﺨﻴﺮ ﻣﺎ ﻋﺠﻠﻮﺍ ﺍﻟﻔﻄﺮ “ মানব জাতি ততদিন পর্যন্ত কল্যাণের মধ্যে থাকবে, যতদিন পর্যন্ত তারা ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করে নেবে । (মুসলিম ) খেজুর দিয়ে ইফতার করা সর্বোত্তম । নতুবা অন্তত ইফতারের সূচনা পানি দিয়ে করা উচিত । ইফতারের দুআ ইফতারের বিভিন্ন পর্যায়ে চারটি দুআ রয়েছে - ১. ইফতারী সামনে এলে এই দুআ পড়া - ﺍﻟﻠﻬﻢ ﻟڪ ﺻﻤﺖ ﻭﻋﻠﯽ ﺭﺯﻗڪ ﺍﻓﻄﺮﺕ ﻭﻋﻠﻴڪ ﺗﻮڪﻠﺖ ﺳﺒﺤﺎﻧڪ ﻭ ﺑﺤﻤﺪڪ ﺗﻘﺒﻞ ﻣﻨﯽ ﺍﻧڪ ﺍﻧﺖ ﺍﻟﺴﻤﻴﻊ ﺍﻟﻌﻠﻴﻢ ২. ইফতরী সামনে রেখে এই দুআ পড়তে থাকা- ﻳﺎ ﻭﺍﺳﻊ ﺍﻟﻔﻀﻞ ﺍﻏﻔﺮﻟﯽ “হে বড় দাতা ! আমাকে ক্ষমা করুন ।- ৩. ইফতারের সময় এই দুআ পড়া - ﺍﻟﻠﻬﻢ ﻟڪ ﺻﻤﺖ ﻭﻋﻠﯽ ﺭﺯﻗڪ ﺍﻓﻄﺮﺕ ‘ হে আল্লাহ ! আমি তোমার জন্য রোযা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিক দ্বারা ইফতার করছি ।’ (আবূ দাউদ ) ৪. ইফতার শেষে এই দুআ পড়া – ﺫﻫﺐ ﺍﻟﻈﻤﺎﺀ ﻭ ﺍﺑﺘﻠﺖ ﺍﻟﻌﺮﻭﻕ ﻭ ﺛﺒﺖ ﺍﻻﺟﺮ ﺍﻥ ﺷﺎﺀ ﺍﻟﻠﻪ “ পিপাসা নিবারণ হয়েছে, শিরা- উপশিরা সিক্ত হয়েছে, ইনশাআল্লাহ সওয়াবও নির্ধারিত হয়েছে । (আবূ দাউদ ) যেসব কারণে রোযা ভেঙ্গে যায় এবং কাযা-কাফ্ফারা উভয় ওয়াজিব হয় ১. রোযা রেখে ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে । ২. ইচ্ছাকৃত স্ত্রী সহবাস করলে । এতে স্বামী স্ত্রী উবয়ের উপর কাযা ও কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে । ৩. রোযা রেখে পাপ হওয়া সত্ত্বে যদি স্বামী তার স্ত্রীর পায়খানার রাস্তায় পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করায় এবং অগ্রভাগ ভেতরে প্রবেশ করে । তাহলে স্বামী স্ত্রী উভয়ের উপর কাযা কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে । ৪. রোযা অবস্থায় কোন বৈধ কাজ করলো, যেমন স্ত্রীকে চুম্বন করল কিংবা মাথায় তেল দিল, তা সত্ত্বেও সে মনে করলো যে, রোযা নষ্ট হয়ে গিয়াছে; আর তাই পরে ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার ইত্যাদি করলো, তাহলে কাযা কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে ।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
TarikAziz

Call

 ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম ফরজ ইবাদত হলো সিয়াম বা রোজা পালন করা। নিজ কু-প্রবৃত্তিকে দমন ও আত্মশুদ্ধির সর্বোত্তম মাস হলো রমজান। এ মাসে হেদায়াতের আলোকবর্তিকা আল-কোরআন নাজিল হয়েছে। এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। এ মাসে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। একজন ঘোষণাকারী ভাল কাজের আহ্বান জানাতে থাকে ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলে। সাথে সাথে এটা হল মাগফিরাতের মাস, জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। এ মাসে রয়েছে লাইলাতুল কদর যা হাজার মাস থেকে শ্রেষ্ঠ। রমজানে যা করনীয় আমরা যখন এ মাসের গুরুত্ব অনুভব করলাম তখন আমাদের কর্তব্য হয়ে দাঁড়াল কীভাবে এ মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানো যায় সে প্রচেষ্টা চালানো।


প্রথমতঃ সিয়াম সাধনায় আল্লাহর নির্দেশ পালন করা হয়। দ্বিতীয়ঃ রোজা দ্বারা সংযমী হওয়া যায়। তৃতীয়ঃ রোজা দ্বারা অতীতের গুনাহসমূহ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। আত্মশুদ্ধি ও তাকওয়া অর্জনের সর্বোত্তম পন্থা হলো সিয়াম সাধনা। মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন- “হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর। [সূরা বাকারা : ১৮৩]”


মহান আল্লাহ রমজান মাসে সিয়াম পালনকে আমাদের উপর অত্যাবশকীয় করে দিয়েছেন এই জন্য যে এই মাসে অবতীর্ণ হয়েছে পবিত্র আল-কুরআন যা বিশ্ববাসীর জন্য হেদায়াত এবং নিদর্শন ও সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী বিধান গ্রন্থ। আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, “রমজান মাস যে মাসে অবতীর্ণ হয়েছে আল-কুরআন, যা মানবজাতির জন্য হেদায়াত এবং হেদায়াতের সুষ্পষ্ট নিদর্শন এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী বিধান। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে এই মাসটি পাবে, সে রোজা রাখবে। আর যে অসুস্থ অথবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে গননা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না, যাতে তোমরা গননা পূরণ করো এবং তোমাদের হেদায়াত দান করার দরুন আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো”। [সূরা বাকারাহ : ১৮৫]


উক্ত আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, সিয়াম সাধনার দ্বারা তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জিত হয়।

রমজান আমাদেরকে সংযমী হওয়ার শিক্ষা দেয়। সিয়াম সাধানার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি হালাল খাদ্য ও পানীয়কে আল্লাহর নির্দেশের কারণে বর্জন করে প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করে। সেই সাথে তারাবীহ, তাহাজ্জুদ, দান-সদকাহ, কুরআন তিলাওয়াতসহ অন্যান্য ইবাদত করার মাধ্যমে তার আত্মার পরিশুদ্ধতা অর্জিত হয়। শুধুমাত্র পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে দিনের বেলায় বিরত থাকাই সংযম নয় বা এটাই সিয়াম সাধনার মূল উদ্দেশ্য নয়। এই পবিত্র মাসকে পূর্ণভাবে আল্লাহর রহমত, বরকত ও নাজাত প্রাপ্তির জন্য আমাদের কিছু করণীয় আছে এবং সেই সাথে কিছু বর্জনীয় কার্যাবলী রয়েছে যা পরিত্যাগ করার মাধ্যমে আমরা রমজান মাসকে কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী পালন করতে পারব।

প্রকৃতপক্ষে রমজান মাসে সার্বক্ষণিক নিজের কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে প্রকৃত তাকওয়া অর্জন করা সম্ভব। আমাদের ভুলে গেলে হবে না যে, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়টুকু রোজার অন্তুর্ভূক্ত নয়; বরং দিন ও রাত্রি উভয় সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে সিয়াম সাধনার প্রকৃত আত্মতৃপ্তি লাভ করা সম্ভব। পবিত্র রমজান মাসে হাদিসে উল্লেখিত কতিপয় আমল দ্বারা আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারি। যেমনঃ


১। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও রহমত লাভের উদ্দেশ্যে সিয়াম সাধনা করাঃ

হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন, যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। অপর বর্ণনায় রয়েছে বেহেশতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, দোযখের দরজাসমূহ বন্ধ করা হয় এবং শয়তানকে শৃংখলিত করা হয়। অপর বর্ণনায় আছে, রহমতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। [বুখারী ও মুসলিম]

রমজান মাসে যেহেতু বেহেশতের ও রহমতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় সেহেতু রোজা রেখে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁর রহমতের আশা করব।


২। মুখ ও জিহ্বাকে সংযত রাখাঃ

পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি নিজের মুখ ও জিহ্বাকে সংযত রাখতে হবে। মিথ্যা, অশ্লীল কথাবাতা, গালিগালাজ, গীবত, পরনিন্দা, অভিশাপ দেয়া ও চোগলখোরীসহ অন্যান্য অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। হাদিসে এসেছে-

অবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিত, নবী করীম সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও মিথ্যা কর্ম পরিত্যাগ করেনি, তার পানাহার ছেড়ে দেয়াতে আল্লাহর কোন কাজ নেয়। [মিশকাত : ১০৮৯, বুখারী]


৩। নিয়মিত তারাবীহর নামাজ আদায় করাঃ

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তারাবীহ পড়তে হবে। কেননা, যে ব্যক্তি রমজানে তারাবীহ নামাজ পড়বে তার অতীতের সগীরা গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। হাদিসে এসেছে-

“হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সা. রমজান মাসের নামাজ কাযেম করার জন্য উৎসাহ দান করতেন; কিন্তু তিনি এ বিষয়ে খুব তাকীদ করতেন না। বরং এরূপ বলতেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের নিয়তে রমজান মাসে নামায কায়েম করবে তার পূর্ববর্তী (সগীরা) গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবে।” [মুসলিম]


৪। কুরআন তিলাওয়াত করাঃ

নফল ইবাদতের মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত হলো কুরআন তিলাওয়াত করা। যেমন হযরত নুমান বিন বাশির রা. হতে বর্ণিত নবী করীম সা. ইরশাদ করেন “আমার উম্মতের সবচেয়ে উত্তম ইবাদত কুরআন তিলাওয়াত করা। [বায়হাকী, শুআবুল ঈমান :হা. ১৮৬৯, মুসনাদুস শিহাব : ১১৯৫]


৫৷ অন্য হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি রমজান মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি নফল কাজ করবে সে ঐ ব্যক্তির সমান হলো যে, অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করল। [মিশকাত :১৮৬৮]

সুতরাং রমজান মাসে কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আমরা অধিকতর সওয়াবের অধিকারী হবো।


৬। নিজে ইফতার করার পাশাপাশি রোজাদারদের ইফতার করানোঃ


হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, “হযরত যায়েদ বিন খালেদ জুহানী রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করালো তাকে রোজাদারের অনুরূপ সওয়াব দান করা হবে। কিন্তু রোজাদারের সওয়াবের কোন কমতি হবে না”। [তিরমিযী : ৮০৭]


৭। মিসওয়াক করাঃ


হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, “আব্দুল্লাহ বিন রবিআ রা. তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সা. কে রোজা অবস্থায় অসংখ্যবার মিসওয়াক করতে দেখেছি”। [তিরমিযী: হা.৭২৫]


৮। সেহরী খেয়ে রোজা রাখাঃ


সেহেরী খাওয়া সুন্নত। সেহেরী খেয়ে রোজা রাখার মধ্যে বরকত নিহিত রয়েছে। হাদিস শরীফে এসেছে, ” আনাস বিন মালেক রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন- তোমরা সেহেরী খাবে। কেননা, সেহরীতে বরকত রয়েছে”। [বুখারী, মুসলিম]


৯। ইফতারের পূর্বে ও ইফতারের সময় দোয়া করাঃ


হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. যখন ইফতার করতেন নিম্নের দোয়াটি পড়তেন, ” হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমার রিজিক দিয়ে ইফতার করছি। তুমি আমার এই রোজাকে কবুল কর। নিশ্চয় তুমি সর্বজ্ঞ, সর্বশ্রোতা”। [তাবারানী : ৮৪৫]


১০। শীঘ্রই ইফতারী করাঃ

হাদিস শরীফে বর্ণিতঃ “হযরত সাহল ইবনে সা’দ রা. বলেন, আল্লাহ রাসূল সা. বলেছেন, মানুষ কল্যানের সাথে থাকবে যতকাল তারা শীঘ্রই ইফতার করবে।” [বুখারী ও মুসলিম]

অন্য হাদিসে আছে, হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত রাসূল সা. বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমার বান্দাদের মধ্যে আমার কাছে তারাই বেশি প্রিয় যারা শীঘ্রই ইফতারী করে। [তিরমিযী, মিশকাত : ১৮৯৬]


১১। খেজুর অথবা পানি দিয়ে ইফতার করাঃ


হযরত সালমান আমের রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে, কেননা এতে বরকত রয়েছে। যদি খেজুর না পায়, তবে যেন পানি দ্বারা ইফতার করে, এটি পবিত্রকারী। [আহমদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, দারেমী]


১২। বেশি করে ইসতেগফার ও দোয়া করাঃ


এই রমজান মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত্রি হলো লাইলাতুল কদর। হাদিস মোতাবেক রমজানের শেষের দশদিন বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করার কথা বলা হয়েছে। এই জন্য যে মহান আল্লাহ দেখতে চান লাইলাতুল কদরের বরকত ও ফজিলত লাভের উদ্দেশ্যে তার কোন বান্দা বেশি ইবাদত করে।

রাসূল (সাঃ) এই শেষ দশকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন তা নিম্নোক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূল সা. কে লাইলাতুল কদরের কথা জিজ্ঞাসা করলাম, আজ কি দোয়া পাঠ করব? তিনি বললেন নিম্নের দোয়াটি পাঠ করবে:

“হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই তুমি ক্ষমাশীল। তুমি ক্ষমাশীলতাকে ভালবাস। অতএব আমাকে ক্ষমা করো। [তিরমিযী : হা. ৩৫১৩, মুসনাদে আহমদ : ১/১৭১]


১৩। মসজিদে এতেকাফ করাঃ


রমজানের শেষের দশদিনে এতেকাফ করা সুন্নত। পুরুষরা মসজিদে এবং স্ত্রীলোকেরা আপন ঘরে একটি স্থান ঘিরে নিয়ে তথায় এতেকাফ করবে। হাদিসে এসেছে-

“হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত যে, নবী করীম সা. রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করতেন, যাবৎ না আল্লাহ তাকে উঠিয়ে নিয়েছেন এবং তাঁর পর তাঁর স্ত্রীগণও এতেকাফ করেছেন। [বুখারী ও মুসলিম]


১৪। বেশি বেশি করে নফল নামাজ আদায় করাঃ


হাদিস মোতাবেক রমজান মাসে একটি নফল ইবাদত করলে একটি ফরজ ইবাদতের সমান মর্যাদা পাওয়া যায়। হাদিসে এসেছে, হযরত আলী রা. বলেন, আমাকে হযরত আবু বকর রা. বলেছেন আর তিনি সত্য বলেছেন তিনি বলেছেন আমি রাসূল সা.কে বলতে শুনেছি যে, কোন ব্যক্তি গুনাহ করবে অতঃপর ওঠে আবশ্যকীয় পবিত্রতা লাভ করবে এবং নফল নামাজ পড়বে; তৎপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। [তিরমিযী, ইবনে মাজাহ]


১৫। বেশি করে আল্লাহর জিকির ও তাসবীহ-তাহলীল করাঃ

রমজান মাসে বেশি করে তাসবীহ পাঠ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্ঠা করতে হবে। মহান আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, “আর যারা কোন অশ্ল¬ীল কাজ করে অথবা নিজেদের প্রতি যুলুম করে আল্ল¬াহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্ল¬াহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে ? আর তারা যা করেছে, জেনে শুনে তা তারা বার বার করে না” । [সূরা আল-ইমরান : ১৩৫]


১৬।রমজান মাসে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করাঃ


রমজান মাসের শেষের দশদিনের বেজোড় রাত্রিতে লাইলাতুল কদরের জন্য বেশি করে আল্লাহর ইবাদত করতে হবে এবং সারা বিশ্ববাসীর শান্তি, ক্ষমা ও স্থিতিশীলতার জন্য দোয়া করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, “লাইলাতুল কদর এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম”। [সূরা কদর : ৩]


১৭। রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করাঃ


রমজান মাসে এমন কিছু করা যাবে না যা শরীয়তপরিপন্থী। যেমন রোজাদারহীন ব্যক্তি রোজাদারদের সামনে পানাহার করা। সেই সাথে অশ্লীল ও অনৈতিক কার্যাবলী থেকে বিরত থাকতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন-” আর অশ্লীল কাজের নিকটবর্তী হবে না, তা থেকে যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে”। [সূরা আন-আম : ১৫১]


হাদিস শরিফে বর্নীত,”যে মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল না তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই”। বোখারি

হাদিসটি দ্বারা স্পষ্ট বুঝে আসে যদি মূর্খতা পরিহার না করা হয় তবে সিয়াম আল্লাহর কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। আর মূর্খতা ত্যাগ করা যাবে শুধু শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে।


আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত ও সৎকর্মের মাধ্যমে এই রমজানের ফজিলত আমরা পূর্ণভাবে অর্জন করতে পারি। মহান আল্লাহ এই রমজান মাসে আমাদের উপর রহমত, রবকত ও মাগফেরাত প্রদান করুন এবং আমাদের জাহান্নাম থেকে নাজাত প্রদান করুন। আমিন।


 শিক্ষকঃ- গোরস্থান মাদ্রাসা- ভোলা।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ