রেডিওফ্রিকুয়েন্সি এব্লাশন শব্দটির সাথে সাধারণ মানুষের প্রথম পরিচয় ঘটে ২০০৪ সালে, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার যখন এর মাধ্যমে তার হৃদপিন্ডের অনিয়ন্ত্রিত স্পন্দন (Recurrent Atrial Flutter) এর চিকিৎসা করান। বোঝাই যাচ্ছে এই পদ্ধতির প্রচলন হয়েছে তারও আগে, আর নিরাপদ বলেই এমন গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি এমন চিকিৎসা নিয়েছেন নির্দ্বিধায়। রেডিওফ্রিকুয়েন্সি এব্লাশন হল তড়িৎ শক্তি (electrical force) এর মাধ্যমে রোগাক্রান্ত কোন বিশেষ কোষ সমুহ বা কলা (tissue) কে ধ্বংস করে দেয়া। শরীরের বহিঃঅংশে আছে এমন কোন অংশ কে সহজেই অপারেশন (operation) এর মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়। রেডিওফ্রিকুয়েন্সি এব্লাশন এর মাধ্যমে ঐসব স্থানেই চিকিৎসা দেয়া হয় যেখানে সহজে সার্জারি (surgery) করা যায়না অথবা করা গেলেও তা দুরহ। সাধারনত হার্ট এর অনিয়মিত স্পন্দন (arrhythmia), বিভিন্ন টিউমার (tumor/cancer), রক্তনালীর ব্লক (arterial stenosis / coronary stenosis) ইত্যাদির ক্ষেত্রেই এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। এ পদ্ধতিতে শরীরের রক্তনালী, খাদ্যনালী বা অন্যান্য স্বাভাবিক গহ্বর (natural orifice) দিয়ে একটি ক্যাথেটার (catheter) বা এব্লাটর (ablator) প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয় এবং ক্ষতিকর টার্গেট এর উপর একে স্থাপন করা হয়। এরপর ঐ ক্যাথেটার এর মধ্যে দিয়ে রেডিওফ্রিকুয়েন্সি ওয়েভ (radiofrequency wave) পাঠিয়ে দেয়া হয়, এর ফলে উৎপন্ন তাপ আশেপাশের সুস্থ্য অংশের কোন ক্ষতি না করে কেবলমাত্র ক্ষতিকর কলা কে ধ্বংস করে দেয়। এর এই পদ্ধতিটি পুরোপুরি সফল করতে অনেক সময় নির্দিষ্ট সময় পরপর একাধিক বার করতে হয়। এজন্য রোগীকে কোন ধরনের অজ্ঞান (general anaeshthesia) করা লাগেনা তাই হাসপাতালে ভর্তি না হয়েই এই চিকিৎসা গ্রহন করা যেতে পারে। তবে যে কোন হাসপাতালে বা যে কোন ডাক্তার এর পক্ষে এই চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব নয়, প্রশিক্ষন প্রাপ্ত বিশেষ চিকিৎসক (cardiac electrophysiologis, interventional radiologist, endoscopist, otolaryngolosit etc) দলের মাধ্যমেই কেবলমাত্র এর সফল প্রয়োগ সম্ভব। নীচে রেডিওফ্রিকুয়েন্সি এব্লাশন এর মাধ্যমে সফল ভাবে যে সব রোগের চিকিৎসা করা হয় তার সংক্ষিপ্ত একটি তালিকা দেয়া হল। হৃদপিন্ড বা হার্ট (Heart) - কার্ডিয়াক এরিদমিয়া (cardiac arrhythmia), এট্রিয়াল ফ্লাটার (atrial flutter), এট্রিয়াল ফিব্রিলেশন (atrial fibrillation), সুপ্রাভেন্ট্রিকুলার টাকিকার্ডিয়া (supraventricular tachycardia), এট্রিয়াল টাকিকার্ডিয়া (atrial tachycardia), ভেন্ট্রিকুলার এরিদমিয়া (ventricular arrhythmia), হাইপারটেনশন (hypertension) বা উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি। বিভিন্ন ধরনের টিউমার (tumor) বা ক্যান্সার (cancer) অন্ননালীর (esophagus) রোগ ব্যারেটস ইসোফেগাস (Barrett’s esophagus) পায়ের শিরার ফুলে যাওয়া রোগ বা ভেরিকোস ভেইন (varicose vein) অবস্টাকটিভ স্লিপ এপনিয়া (obstructive sleep apnea) বিভিন্ন ধরণের অসহ্য তীব্র ব্যথা (intractable pain management) জরায়ুর ফাইব্রয়েড/ ইউটেরিয়ান ফাইব্রয়েড (uterine fibroid) ইত্যাদি।
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে