আজও সকাল থেকে তোমার অপেক্ষায় আছি, মনে পড়েনি বুঝি? আমার কি কষ্ট হয় না? কেনো প্রতিদিন এরকম করছো? জানো, তোমাকে দেব বলে নতুন আরেকটা পুতি তৈরী করেছি! অনেক যত্ন করে নিজ হাতে বানিয়েছি। আমার একটুও কষ্ট হয়নি।কারণ আমি অনেক অভিজ্ঞ হয়ে গেছি। আগের মতো হাতে সুঁই ডুকে না, রক্তও বের হয়না। ভাবছি, আমি প্রতিদিন একটা করে পুতি বানাবো। আর সেটাতে তোমার নাম লিখে রাখবো। তুমি যখন আসবে তখন একসাথে সব তোমার হাতে দেব।খুশিতে তুমি আমাকে অনেক আদর করবে।অনেক ভালোবাসা দিবে। আমার কোনো দুঃখ থাকবেনা সেদিন।বুঝতে পারছো বাবু?

কি হলো? আজ রাগে নাকি? কথার উত্তর দিচ্ছ না যে! অনেক অভিমান করেছো তাইনা? এখন কি করতে হবে আমায়? গান শুনাবো? কান ধরে উঠবস করবো নাকি উড়ে এসে পাপ্পি দিব? হাহাহা!

 জানো, আজকে কি হইছে? আমার তোতা পাখিটা আবার এসেছিল। এক ঘণ্টা কোলে বসে কথা বলছে।আমাকে অনেক পাপ্পি দিয়েছে।তুমি আবার রাগ কইরো না। তোতা পাখিকে তো নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবো! না জানি হয়তো করেই ফেলছো। সত্যি বলতে, রাগ করলেও কিছু করার নেই।পখিটাকে অনেক ভালোবাসি।

এই দুষ্টু এখনও কথা বলছো না যে? দেখো, বেশি চুপ থাকলে আমি কিন্তু কথা বলবোনা। জানোতো, আমিও অনেক বেশি অভিমানী।একবার যদি কথা বলা বন্ধ করি তাহলে আর কথা বলবোনা। তখন তুমি কাঁদবে আর কাঁদবে।

 জানো রিপু, গতকালকে আমার আব্বু আসছিল! সঙ্গে মা ও ছিল। আমি অনেক খুশি হয়েছিলাম।কিন্তু! মা কেনো যে একটুও হাসি খুশি ছিলেন না। সারাক্ষণ আমার পাশে ছিলেন। আমাকে নিজ হাতে খাইয়েছেনও।কেনো জানি, আঁচল ঢেকে কাঁদছিলেন! জিজ্ঞেস করছিলাম, কিন্তু কিছুই বলেন নি। তুমি তো জানো না, আমার মা অনেক শুকিয়ে গেছেন। মনে হয়, মায়ের মনে অনেক দুঃখ।

আচ্ছা রিপু, তুমি আর আমি মিলে মায়ের দুঃখটা কি মুছে দিতে পারি না? আমি মাকে অনেক ভালোবাসি।মায়ের কষ্ট আমারএকদম সহ্য হয় না। মায়ের মন খারাপ দেখলে আমার মনটাও খারাপ হয়ে যায়। বলোনা, আমার মায়ের মুখে হাসি এনে দিবে? কতদিন মায়ের হাসিমুখ দেখিনা।ওই যেদিন তুমি আর আমার মামণি টুম্পা এক সাথে পরীর দেশে বেড়াতে গেলে তার দুদিন আগে আমার মায়ের শেষ হাসি দেখেছিলাম, সেটা আমার খুব মনে আছে।এরপর থেকে কেনো জানি আমার মা আর হাসেন না। আসলে, তুমি খুব দুষ্টু! আমার মায়ের আদূরে নাতনীকে নিয়ে তুমি অনেক দূরে পাড়ি জমিয়েছো।অথচ কতদিন হয়ে গেল এখনও ফিরে আসছো না। কবে আসবে বলো না। আমার মামণিটাকে কতদিন দেখিনা।আমার বুকটা হাহাকার করছে।টুম্পা কে নিয়ে তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসো।মেয়েটার খুব ক্ষিধে লাগছে মনে হয়। আচ্ছা, টুম্পা কতবড় হইছে? নিশ্চয়ই হাঁটতে শিখে গেছে, তাই না।পরীরা কি ওকে আদর করে, নাকি বকা দেয়? সে কি আমাকে না দেখলে এখনও কাঁদে? শোনো আমার মেয়েটাকে তুমি বকবেনা।মামণিটা একটুতেই কান্না করে ফেলে। তাছাড়া আমিও নেই, নিশ্চয় সে খুব ভালো থাকবেনা।

আচ্ছা, সেদিন আমাকে কেনো সাথে নাও নি।আমি থাকলে তো একসাথে থাকতে পারতাম, মজা করতাম, হাঁটতাম, গান গাইতাম! কত আনন্দে আমাদের দিনগুলো কাঁটতো।আমাকে এতো অপেক্ষা করতে হতো না।তুমি আসলেই স্বার্থপর! নিজের মেয়েকে নিয়ে একা চলে গেছো ।আর আমাকে এখানে বন্দিনী করে রেখেছে ওরা। তুমি তো জানো, আমি ইনজেকশন কত্ত ভয় পাই। ইনজেকশন দেখলে কান্না করে সম্পূর্ণ বাসা তুলপাড় করে ফেলতাম।অথচ এখানের মানুষগুলো আমাকে জোর করে ইনজেকশন দিয়ে দেয়।আমি কখনও কখনও দৌড় দিলে ওরা আমাকে চড় থাপ্পরও মারে। আমি সেটা মাকে বলছিলাম। মা বলছে, “আমি সুস্থ হলেই আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে।” আচ্ছা তুমি বলোতো রিপু, ‘ আমি কি অসুস্থ নাকি?’ আমি তো একটুও অসুস্থ নয়।হুদাই আমাকে এখানে রাখা হয়েছে।একটা কথা কি জানো? এখানে বেশির ভাগ মানুষ আমাকে পাগলি বলে ডাকে! আসলে কি আমি পাগলি? আমি তো সব কিছুই বুঝতে পারি, ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করি, মাঝেমধ্যে গানও গাই। তাহলে আমি কেনো এসব বলে? আমার কিন্তু খুব রাগ হয়। আমিও তাদের বলে দিছি, “ আমার হাজবেন্ড আসলে তোমাদের দেখে নেবে।” কি ঠিক করছিনা? আমাকে পাগলি বলে কতো বড় সাহস! ওরা জানে নাতো আমার বাবু যদি জানতে পারে তবে ওদের কি করবে? তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসো, আমি আর এখানে থাকতে পারছিনা।

“এই পাগলি, খাইতে চল। আর কত বিলাপ করবি? তোর জন্য আমরা কি সারারাত জেগে থাকবো নাকি? ছবিটা খাটে রেখে চল।”(নার্স)

দেখছো বাবু, ওরা আবার আমাকে পাগলি বলছে।এরা সবসময় আমার সাথে এরকম করে ।তোমার সাথে কথা বলতে চাইলেই এসে ডিস্টার্ব করে।এখন বলছে, ‘খাবার খাইতে!’ না খাইলে আবার মারবে। বলোতো বাবু ওদের কোনো আক্কেল জ্ঞান নেই নাকি? তোমার সাথে কথা বলছি, এখন কি খাওয়ার সময় হলো? যাইহোক, ওরা যখন বলছে তখন খাইতেই হবে।আমি খেতে যাচ্ছি।তুমিও খেতে যাও। অনেক রাত হয়েছে। আর শোনো, আমার মামণিকে ঠিকমত সময় দিও।আর বলে দিও, ওর হতভাগী মা এক বন্দীশালায় আবদ্ধ।তার কাছে আসতে পারছেনা ।তারমুখে স্তন দিয়ে পেঠের ক্ষিধা ও পিপাসা কোনোটা নিবারণ করতে পারছেনা।বলে দিও, “মা তার জন্য অনেক কাঁদে…”

(লেখা : আলী সুহান)


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে