উত্তরঃ # জিন কাদের উপরে বেশী আসে:
প্রথমে আসি খারাপ জিন কোন ধরনের লোকদের আক্রমণ করতে পারে বেশী তাদের আলোচনায়:
১। যারা শিরকে জড়িত, তাদেরকে শয়তান, যাদু ও বদনজর খুব সহজে ঘায়েল করে ফেলে। শিরকের অনেক রূপ আছে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে বেশী শক্তিধর মনে করা, কোন ব্যক্তিকে বা কোন জিনিসকে আল্লাহর মত শক্তিশালী মনে করা; কোন মানুষকে সমস্যা সমাধান কারী মনে করে তার সাহায্য চাওয়া, তাবিজ তুমারকে শক্তিশালী মনে করা এসব ই শিরকের অন্তর্ভূক্ত । যারা এসব করে তাদেরকেই জিন, বদনজর বা যাদু বেশী ঘায়েল করে।
২। যারা হারাম খায়, হারাম লেনদেন করে, হারাম ব্যবসায় যুক্ত থাকে বা কোন রকম হারাম উপায়ে পাওয়া অর্থ ভোগ করে। যারা ফাঁকি দিয়ে অন্যের সম্পদ হাতিয়ে নেয়, অবৈধ পথে দ্রুত ধনী হতে যেয়ে চোরা কারবারে লিপ্ত হয়। মোট কথা হারাম উপায়ে উপার্জন করা খাদ্য দ্বারা বানানো শরীর, ঘর ও সন্তানের উপর সহজেই জিন, বদনজর বা যাদু টোনা কাজ করে।
৩। আল্লাহকে যারা ভুলে যায়, দিনের দুই একবারও যারা আল্লাহকে স্মরণ করে না, নামায কালাম নাই জীবনে, যিকির নেই, দুয়া নেই, কোরআন তিলাওয়াত নেই, বাসায় কোরআনের বাণী তেলাওয়াত নেই তাদেরকে এই সব জিনিষ সহজে আক্রমন করে।
৪। নাপাক থাকা ব্যক্তিদেরকে শয়তান খুব সহজে আক্রমন করে। বিশেষ করে গোসল ফরয হলে যারা দীর্ঘক্ষন ধরে না গোসল করে থাকে তাদের উপর খারাপ জিন মারাত্মক ভাবে ছায়া করে। মাসিক শেষে পবিত্র হলে দেরী না করেই গোসল করা উচিত। মনে রাখতে হবে জিন, বদনজর বা যাদু টোনা সব সময় পাক থাকা ব্যক্তির উপর সহজেই কাজ করে না।
৫। যে বাড়িতে কোরআন তিলাওয়াত বা যিকির আযকার হয় না। বরং ভর্তি থাকে জীব জন্তু, মূর্তি ও শয়তানের প্রিয় মানুষদের ছবি দিয়ে। এসব বাড়িতে রহমানের ফিরিস্তা ঢুকতে পারে না বলে খারাপ জিন, খারাপ লোকদের আনাগোনা ও বদনজর ও যাদু খুব বেশি থাকে। এসব বাসাতেই থাকে ডিপ্রেশান, ঝগড়া, মনোমালিন্য বা হিংসার প্রকোপ।
৬। শরীরের যে সব অংগ প্রত্যাংগ ঢাকা ফরয, সে সব অংগ অযথা খুলে না রাখা উচিত। যারা এগুলো খুলে বাইরে বের হয়, বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে, বিশেষ করে সন্ধ্যায় ও সূর্য উঠার সময়ে বাইরে ঘোরাফেরা করে তাদের উপর জিনের প্রভাব পড়তে পারে। কারণ জিনরা কখনো কখানো মানুষের প্রেমে পড়ে।
৭। বাথরুম ও টয়লেট খারাপ জিনদের থাকার স্থান। এসব স্থানে দু’আ পড়ে ঢোকা, বের হতে দু’আ পড়া উচিত। সেখানে গান গাওয়া, অনেক সময় নিয়ে থাকা, প্রয়োজন শেস হলেও অকারণে দেরী করা উত্যাদি অনুচিত।
৮। যারা জিনদের কে অযথা কষ্ট দেয়, বা অযথা ভয় করে, বা পূজা করে তাদেরকে জিন ক্ষতি করে। অনেক সময় কুকুর বিড়াল বা সাপের রূপ ধরে ঘুরে বেড়ায়। তাদের উপর কোন রকম কষ্ট দেয়া ঠিক নয়।
৯। অসম্ভব রেগে গেলে মানুষকে জিনে সহজে কাবু করে ফেলে।
১০। জিন বা অদেখা জিনিসের উপর ভীষণ ভয় হলেও অনেক সময় জিনে ধরে।
১১। সারাক্ষণ শুধু যৌনতা চিন্তা করা, বা এ ধরনের সিনেমা মুভি ভিডিও দেখা, বা বাজে অশ্লিল ছবি বা বই পড়া, এ ধরণের সংগীদের সাথে বাজে বিষয় নিয়ে ফোনালাপ বা চ্যাট করা জিনদের জন্য খুব উর্বর জায়গা। এসব লোকদেরকে সহজেই জিনে আক্রমন করে।
১২। প্রতিটি মানুষের সাথে দুইজন সাথী থাকে, একজন শয়তান থেকে অন্য জন ফিরিস্তাদের থেকে। ভালো মানুষদের শয়তান ক্ষতি তো করেই না, ক্ষতি করার চেষ্টা করলে ভালো মানুষটার দু’আ ও আল্লাহর সাহায্যে ভালো হয়ে যায়। খারাপ মানুষেরা বা মূর্খ মানুষেরা সেই দু’আ গুলো না জানার কারণে সমস্যায় পড়ে।
#জিন থেকে আত্মরক্ষার উপায়:
১। শরীয়তের নির্দেশ সমূহ মেনে চলার মাধ্যমে:
ক) নিয়মিত সালাত, সিয়াম, যাকাত ইত্যাদি ইবাদাদ গুলো ঠিক মত আদায় করা।
খ) যে সব আদেশ নিষেধ আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে তা সঠিক ভাবে মেনে চলা।
২। কোরআনে এবং হাদিসে বর্ণিত দু’আ গুলো ঠিক মত পড়া।
ক) ঘুমানো
খ) ঘুম থেকে উঠা
গ) অযু
ঘ) খাওয়া
ঙ) বাইরে যাওয়া
চ) ফিরে আসা
৩। টয়লেটে যাওয়ার আগে পরে দোয়া পড়া
৪। টয়লেটে বা বাথরুমে কথা না বলা, চিৎকার না করা, গান না গাওযা।
৫। বিসমিল্লাহ বলাকে সংগী বানানো।
৬। কোন গর্তে বা ভাংগা স্থানে পেশাব না করা।
৭। বেওয়ারিশ কোন কুকুর বিড়াল, সাপ, বা অন্যান্য কোন প্রাণীকে সাবধান না করিয়ে কষ্ট না দেয়া।
৮। স্বামী স্ত্রীর মিলনের সময় দোয়া পড়া। এবং গোসল ফরয হয়ে গেলে অযথা দেরী না করা ।
৯। সন্তানদের উপর ‘আঊযু’ মূলক যে সব দোয়া আছে তা বার বার পড়া:
১০। সূর্য ডোবার সময় বা তার পরে বাচ্চা ও মেয়েদের বাইরে না যাওয়া।
১১। শরীর বন্ধ রাখবে:
ক) হারাম থেকে পরিহার করা
খ) যথা সম্ভব পাক সাফ থাকা
গ) সৌন্দের্যের স্থান সমূহ খোলা না রাখা
ঘ) দোয়া পড়ে শরীরে বুলায়ে নেয়া
ঙ) কোরআন তিলাওয়াত করা
১২। ঘর বন্ধ করবে:
ক) কমপক্ষে সপ্তাহে একবার সূরা বাক্কারা ঘরে পাঠ করা
খ) ঘরে অশ্লীল সিনেমা, অশ্লীল কাজ ও কথা ও নোংরা ছবি না রাখা
গ) রূমসমূহ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং দূর্গন্ধ কোন জিনিস না রাখা।
ঘ) জিনের পছন্দের খাবার গুলো যথাসম্ভব বাইরে রাখা।
।