এলইডি প্রকৃতপক্ষে একটি সম্মুখ ঝোঁক বিশিষ্ট P-N জাংশন ডায়োড। এটি GaAs, GaP প্রভৃতি অর্ধপরিবাহী যৌগ দ্বারা প্রস্তুত করা হয় যাতে তাদের বেশিরভাগ শক্তি আলো হিসেবে নির্গত হয়। এই আলোর বর্ণ ব্যবহৃত বস্তুর উপাদানের উপর নির্ভর করে।
এবারে জেনে নেব এলইডি এর সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত। মূলত দু ধরনের এলইডি প্যানেল রয়েছে। সাধারণ এবং এসএমডি (সারফেস মাউন্টেড ডিভাইস) প্যানেল, অধিকাংশ আউটডোর এবং খুব অল্প কিছু ইনডোর স্ক্রিণ সাধারণ প্যানেল ব্যবহার করে তৈরী করা হয়। যেখানে লাল নীল এবং সবুজ এই তিনটি বর্নের ডায়োড একটি পুর্ণ পিক্সেল তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। পিক্সেলসমুহ পরষ্পর থেকে সামান্য দুরে অবস্থান করে। এ প্রযুক্তির প্রধান সুবিধা হল উপযুক্ত উজ্জলতা। বাইরে ব্যবহৃত স্ক্রিনসমুহে উজ্জলতা বেশি না হলে দিনের আলোতে ভাল দেখা যাওয়ার কথা না। এলইডি প্রযুক্তি ৫,০০০ লাক্স উজ্জলতা বিশিষ্ট ডিসপ্লে প্রদান করে। এই উজ্জলতা দিনে সুর্যের আলোর চেয়েও উন্নত। ফলে যত রোদই হোক না কেন খুব সহজেই স্ক্রিনে চলমান ছবি দেখা যায়। এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত সবচেয়ে বড় এলইডি ডিসপ্লেটির অবস্থান হলো লাস ভেগাসএ, এবং এটি লম্বায় ১৫০০ ফিট এর বেশি। এসএমডি প্যানেল বিশিষ্ট ডিসপ্লেসমুহ সাধারণত ইনডোর স্ক্রিন নির্মানে ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে ডায়োড সমুহ একটি চিপসেটে সংযুক্ত থাকে। পিক্সেলসমুহ একে অপরের খুব কাছাকাছি অবস্থান করে এবং এর উজ্জলতা কমপক্ষে ৬০০ লাক্স (ক্যান্ডেলস পার স্কয়ার মিটার) হয়।
LED প্রযুক্তির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

LED মুলত একটি ছোট আকারের আলোক নিংসরণকারী যন্ত্র। এলইডি ডিসপ্লের ইতিহাস আলোচনা করতে গেলে এই বস্তুটির ইতিহাস জানা আবশ্যক। এটি যুগের বিবর্তনে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে এবং হাজার হাজার এলইডি একত্রিত হয়ে তৈরী করেছে আজকের এলইডি ডিসপ্লে।
১৯০৭: মার্কনী ল্যাব এ কর্মরত অবস্থায় বিড়ালের গোঁফ ও সিলিকন কার্বাইড ডিটেক্টর ব্যবহার করে ব্রিটিশ গবেষক এইচ জে রাউন্ড আবিষ্কার করলেন ইলেক্ট্রালুমিন দৃশ্য।
১৯২৭: অলেগ ভøাদিমিরভিচ লোসেভ লাইট এমিটিং ডায়োড আবিষ্কারের ঘোষনা দেন।
১৯৬১: দুই আমেরিকান গবেষক রবার্ট রিচার্ড এবং গ্যারি পিটম্রান টেক্সাস ইনস্ট্রুমেন্টস এ কর্মরত অবস্থায় দেখলেন যে জিএএস (গ্যালিয়াম আরসেনাইড) এ বিদ্যুৎ প্রবাহের মাধ্যমে এ থেকে ইনফ্রারেড বিকিরন সম্ভব এবং এটি বাস্তবে পরীক্ষার মাধ্যমে ইনফ্রারেড এলইডি এর নামকরন করেন।
১৯৬২: ১৯৬২ সালে নিক হলোনায়ক্্ জুনিয়র প্রথমবারের মতো লাল রং এর এলইডি আবিষ্কার করেন। সুতরাং হলোনায়ক্্ ই হলেন এলইডি এর আবিষ্কারক।
১৯৬৮: এইচ পি (হিউলেট প্যাকার্ড) কোম্পানী গ্যানিয়াম আর্সেনাইড ফসফাইড ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন ইনডিকেটরে ব্যবহারযোগ্য এলইডি তৈরী করে এবং তা ক্যালকুলেটরে ব্যবহার করতে সমর্থ হয়।
১৯৭৬: নতুন প্রজন্মের সেমিকন্ডাকটর আবিষ্কারের মাধ্যমে টিপি পিয়রেস্যাল তৈরী করেন উচ্চমানের উজ্জলতা ও উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন এলইডি। এবং এটি তৈরী করা হয় অপটিক্যাল ফাইবারে ব্যবহারের জন্য।
১৯৯৫: ক্যাডরিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেশনারত অ্যালবেটো বারকেইরির হাত ধরে আলোর মুখ দেখে ইনডিয়াম টিন অক্সাইড গঠিত এলইডি।
২০০৬: কয়েক বছর আগে সর্বপ্রথম উচ্চ-উজ্জলতা বিশিষ্ট নীল রং এর এলইডি তৈরী করতে সমর্থ হন সুজি নাকামুরা। ২০০৬ সালে তিনি এলইডি তে বিশেষ অবদানের জন্য মিলেনিয়াম টেকনোলজি পুরষ্কার গ্রহন করেন।
২০০৯: কলিন হামফ্রেয়স এর অধীনে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক গ্যালিয়াম নাইট্রাইড এলইডি প্রস্তুত করেন। ফলে এলইডি তে খরচ নব্বই শতাংশ কমে যায়।
এই হলো এলইডি এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। আনেকের মতে ১৯৯৯ এর কোন এক সময় প্রথম আধুনিক এলইডি ডিসপ্লে প্রদর্শিত হয় যা ছিল অনেকটা বর্তমান এলইডি টিভি বা মনিটরের মত।