পবিত্র কুরআন যে আল্লাহর বাণী- এতে মুসলমানের বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এমনকি নীতিবান অনেক অমুসলিমও তা স্বীকার করেন। অবশ্য নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন রচনা করেছেন- এমন ধারণাও পশ্চিমাবিশ্বের অনেকে পোষণ করে! এমনকি পশ্চিমাবিশ্বের যেসব লেখক ইসলামের প্রতি সহমর্মী বলে মনে করা হয়- সেই তারাও মানতে রাজি নন যে, কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত ঐশীবাণী! এখানে সুপ্রমাণিত ঐতিহাসিক তথ্য এবং বুদ্ধি ও বিবেকের আলোকে এবিষয়ে কিছুটা আলোকপাত করা জরুরি মনে করছি- এক. মক্কাবাসী সকলের একথা জানা ছিল যে, নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিরক্ষর; তিনি লিখতে ও পড়তে জানেন না। স্বয়ং কুরআন এ সম্বন্ধে বলছে, ‘সুতরাং তোমরা সবাই বিশ্বাস স্থাপন করো আল্লাহর ওপর, তাঁর প্রেরিত নিরক্ষর নবীর ওপর, যিনি বিশ্বাস রাখেন আল্লাহ এবং তাঁর সমস্ত কালামের ওপর। তাঁর অনুসরণ করো যাতে সরল পথপ্রাপ্ত হতে পার।’ (সূরা আ’রাফ, আয়াত : ১৫৮) নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণিত আছে, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বয়স যখন ৪০ বছর এবং ফেরেশতা জিবরাঈল প্রথম ঐশীবাণী নিয়ে আসলেন, ‘ইকরা’ (পড়)- তখন তাঁর সোজা উত্তর ছিল, ‘আমি তো পড়তে পারি না।’ (সহিহ বুখারি : ৪) এটা তো একেবারে শুরুর দিকের কথা, তখন তো পুরো কুরআন নাজিলই হয় নি! সুতরাং নিশ্চয় যেভাবে কুরআন বলছে যে, নবী নিরক্ষর হওয়াটাই এই মহাগ্রন্থ ঐশীবাণী হওয়ার এক জাজ্বল্য প্রমাণ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আপনি তো এর পূর্বে কোনো কিতাব পাঠ করেননি এবং স্বীয় দক্ষিণ হস্ত দ্বারা কোনো কিতাব লিখেননি। এরূপ হলে মিথ্যাবাদীরা অবশ্যই সন্দেহ পোষণ করত।’ (সূরা আনকাবুত, আয়াত : ৪৮) দুই. নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনচরিত অধ্যয়ন করলে আমরা দেখতে পাই, কখনও কখনও তাঁর সামনে কোনো প্রশ্ন বা সমস্যা পেশ করা হয়েছে, কিন্তু ঐশীবাণী ব্যতিরেকে তিনি সেটা সমাধান করতে সক্ষম ছিলেন না। বরং কখনও ঐশীবাণীর অপেক্ষায় সপ্তাহ বা মাস অতিবাহিত করতে হয়েছে আর এজন্য মুশরিকদের গালি ও অপবাদ শুনতে হয়েছে। যদি কুরআন তাঁর নিজেরই রচনা হয়ে থাকে, তবে এই অপেক্ষার কী হেতু ছিল? উদাহরণস্বরূপ দেখুন! মদিনায় মুসলমানগণ প্রথমে বায়তুল মাকদিসের দিকে ফিরে নামাজ পড়তেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আশা ছিল বায়তুল্লাহর দিকে ফিরে নামাজ পড়বেন। কিন্তু তিনি নিজে থেকে কিবলা পরিবর্তন করেননি। বরং আল্লাহ তায়ালার হুকুমের অপেক্ষায় বহুদিন যাপন করেছেন। কুরআন বলছে, ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বারবার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি।অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি মসজিদুল-হারামের দিকে মুখ করুন।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৪৪) এখানেই শেষ নয়। যখন কিবলা পরিবর্তনের এই ঐশীবাণী মুসলমানদের নিকট পৌঁছে, তখন তারা জামাতে নামাজরত ছিলেন। আদেশ শোনামাত্রই তারা বায়তুল্লাহর দিকে মুখ ফিরিয়ে নেন। সেই মসজিদটি আজও মদিনায় ‘মসজিদে যুল কিবলাতাইন’ নামে সুরক্ষিত আছে। এজাতীয় আরও অনেক দৃষ্টান্ত থেকে প্রতিভাত হয়, কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত ঐশীবাণী। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজের রচনা হলে এমন অপেক্ষা আর সময় ক্ষেপণের কোনো প্রয়োজনই ছিল না। তিন. ইসলামের দ্বিতীয় মৌলিক উৎস হচ্ছে হাদিস।নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা, কাজ ও সমর্থনকে পরিভাষায় হাদিস বলে।বলাবাহুল্য, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাতৃভাষাই ছিল আরবি। কিন্তু কুরআনের আরবি এবং হাদিসের আরবির মধ্যে আমরা বিরাট তফাৎ লক্ষ করি। কেননা কুরআনের শব্দচয়ন, বাক্যের গাঁথুনি এবং বর্ণনাশৈলী নবীজির দৈনন্দিন জীবনে স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তায় ব্যবহৃত আরবির চেয়ে উচ্চাঙ্গের এবং অতুলনীয়।তাছাড়া কুরআনের বাণী নাজিল হওয়ার সময় নবীজির মাঝে বিশেষ অবস্থা পরিলক্ষিত হত।যেমন- চেহারা লালবর্ণ ধারণ করা, তীব্র শীতকালেও শরীর থেকে ঘাম ঝরা এবং কিছুক্ষণের জন্য নীরব হয়ে যাওয়া- এসব তাঁর হাদিস বলার অবস্থার সম্পূর্ণ বিপরীত। সুতরাং এসকল ব্যতিক্রম থেকে অনায়াসে বোঝা যাচ্ছে যে, কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত ঐশীবাণী।তথ্যসুত্রঃপরিবর্তন.কম